সিরাজগঞ্জ: অনেক ত্যাগ ও রক্তদানের পর স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় যমুনাপাড়ের শহর সিরাজগঞ্জ।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই অন্যান্য উপজেলাগুলো হানাদার মুক্ত হতে থাকে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের চিফ-ইন-কমান্ড (সিএনসি) সোহরাব আলী সরকার বলেন, সিরাজগঞ্জকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ৯ ডিসেম্বর শহরের উত্তরে শৈলাবাড়ী পাকিস্তানি ক্যাম্পে হামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন তুমুল যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওই যুদ্ধে সুলতান মাহমুদ শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর বিশ্রাম নেওয়ার পর ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালান মুক্তিযোদ্ধারা। ১৩ ডিসেম্বর হানাদারদের ওপর তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু করেন তারা। ওইদিন রাত ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে টিকতে না পেরে ট্রেনে করে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায় পাকি সেনারা। যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব, সুলতান মাহমুদসহ পাঁচজন।
এর আগে ১৯৭১ সালের এপ্রিলের দিকে হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জে প্রবেশ করে। তখন বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ব্যর্থ হন মুক্তিযোদ্ধারা। সিরাজগঞ্জ চলে যায় হানাদারদের দখলে। এরপর অনেকগুলো সম্মুখযুদ্ধ হয়। বড়ইতলী, বাগবাটি, ব্রহ্মগাছা, নওগা, বারুহাস, কৈগাড়ি ও ভদ্রঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিপুল সংখ্যক হানাদার নিহত হয়।
কোরবান আলী বিন্দু, আব্দুল আজিজ সরকার ও মির্জা ফারুক আহম্মেদসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৪ ডিসেম্বর সকালে মিত্র বাহিনীর প্লেন সিরাজগঞ্জ জেলার ওপর টহল দেয়। পরিত্যক্ত শত্রুশিবির লক্ষ্য করে প্লেন থেকে গুলি ছোড়া হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। ওয়াপদা অফিসে হানাদার বাহিনীর প্রধান ক্যাম্পও দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। শহরের বিএ কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে দিয়ে ওড়ানো হয় বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত জাতীয় পতাকা। মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়, কওমি জুটমিলসহ সব সরকারি-বেরসকারি প্রতিষ্ঠানে ওড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা। মুক্ত সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে এবং সিরাজগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমির হোসেন ভুলুকে।
সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এক কাতারে সংগঠিত করেছেন তাদের মধ্যে প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, শহীদ মহকুমা প্রশাসক শামসুদ্দিন, পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা (সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা), গাজী সোহরাব আলী সরকার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, প্রয়াত আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া (সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান), মরহুম লুৎফর রহমান অরুন, জহুরুল ইসলাম, গাজী শফিকুল ইসলাম শফি, আলাউদ্দিন শেখ, ইসহাক আলী, আব্দুল হাই তালুকদার, বিমল কুমার দাস অন্যতম।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, সিরাজগঞ্জ মুক্তদিবস উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ১৪ ডিসেম্বর সকালে পতাকা উত্তোলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একটি র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করবে। একই সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
এসআই