ময়মনসিংহ: ‘সেদিন ছিলো ১০ ডিসেম্বর। কুয়াশার পরিবর্তে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া।
ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হওয়ার খবরে ভয়ার্ত মানুষগুলো যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তাদের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সূচিত হয়েছিল একটি মাইলফলক।
বাঁধভাঙা মানুষের ঠিকানা ছিলো নগরীর এস. কে. হাসপাতালের সামনের কড়ই গাছের নিচে। এরপরই শুরু হলো মুক্তিযোদ্ধা-জনতার বিজয় মিছিল।
মিত্রবাহিনীর কমান্ডার সানথ সিং বাবাজী মিছিলে আমার হাত ধরে রেখেছিলেন। সব পথ যেনো মিশেছিল সার্কিট হাউজে। মুক্তির আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে মানুষ। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক সকাল ছিলো সেদিন। ’
গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের কাছে ঐতিহাসিক ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসের প্রেক্ষাপট এভাবেই বর্ণনা করছিলেন বর্তমান সরকারের ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এ সভাপতি সেদিন ঐতিহাসিক সেই বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সেইসময় তিনি ছিলেন মুক্তিবাহিনীর যুবপ্রধান। তার হাতেই ওইদিন বাতাসে উড়েছিল রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের পতাকা।
বিজয় আনন্দের সেই স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণেই স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি।
প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের মনের হীরক দ্যুতিতে আজও জ্বলে রয়েছে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার সানথ সিং বাবাজীর নাম। মতিউর রহমান আর বাবাজী মিলেই সেদিন ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসের মুক্তিযোদ্ধা-জনতার বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সার্কিট হাউজে পৌঁছে প্রিন্সিপাল মতিউর বাবাজীকে অনুরোধ করেছিলেন, জাতীয় পতাকা তুলতে।
কিন্তু বাবাজী বলেছিলেন, এটা তোমার দেশের কৃতিত্ব। তুমিই দেশের হয়ে পতাকা উত্তোলন করো। বাবাজীর কথায় সাড়া দিয়ে গর্ব নিয়েই লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করি, বলছিলেন মতিউর।
তার ভাষ্যে, মুক্তিযোদ্ধা জনতাও পতাকাকে সালাম জানালো। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠলো সার্কিট হাউজ মাঠ।
মতিউর আর বাবাজীর মধ্যে গভীর সখ্য ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ০৩ ডিসেম্বর বাবাজী মতিউরকে কথা দিয়েছিলেন, সাত দিনের মধ্যে ময়মনসিংহ গিয়ে তার বাসায় চা খাবেন।
স্মৃতির মায়াজালে আকীর্ণ সেই কথা উঠে আসে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের জবানিতে।
‘ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসের দিন সন্ধ্যায় আমি বাবাজীকে তার দেওয়া কথা স্মরণ করিয়ে দেই। এরপর বাবাজীকে নিয়ে আমার আকুয়া মোড়লপাড়ার বাসায় যাই। বাবাজী চা পানের পর আমার বাবার পা ছুঁয়ে কদমবুচি করেন।
আমার বাবাও গর্বে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। আসলে বাবাজী ছিলেন অনেক বড় মাপের মানুষ। দেহের চেয়ে তার হৃদয় ছিলো আরও বড়’। ভারী কণ্ঠস্বরে স্মরণ করছিলেন ধর্মমন্ত্রী।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একই সঙ্গে ভারতে ছিলেন।
তবে জিয়াকে বেঈমান আখ্যা দিয়ে প্রিন্সিপাল মতিউর বলেন, জিয়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে বেঈমানি করেছিলেন। এ কারণে তার সঙ্গ ত্যাগ করেছিলাম। এবং তার দেওয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
ধর্মমন্ত্রী মতিউর বলেন, ঐতিহাসিক ০৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত দিক নির্দেশনামূলক ভাষণের পর ময়মনসিংহ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত হয়ে ওঠে।
শেষে যোগ করেন, ট্রেনিং ক্যাম্প করে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো নয় মাস বাড়ির বাইরে ছিলাম। আবার বিজয় নিয়েই বাড়ি ফিরেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এমএএএম/এসএনএস