ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ চায় বিএমবিএ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ চায় বিএমবিএ

ঢাকা: ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মহাধসের পর থেকেই দরপতনের কারণে অস্থিতিশীল রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। তাই বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগসহ ৬ প্রস্তাবের বিশেষ প্রনোদণা প্যাকেজ চায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দীর্ঘ এ দরপতনের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের টেনে ধরা লাগামের কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফেরানোর এখনি সঠিক সময়। অন্যথায় দেশের পুঁজিবাজার বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।
 
এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এমনকি পাশের দেশ ভারতে পুঁজিবাজারের ধস ঠেকাতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে ধসের কয়েকদিনের মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে বড় ধরনের ধস হয়েছে কেবল ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে। ফলে এখন পর্যন্ত অস্থিতিশীল রয়েছে দেশের বাজার। এ সংকট থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।

বিএমবিএ’র প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে- বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে অপ্রদশিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগ, মার্জিন লোনের প্রতিষ্ঠানের সুদ বাতিল, তালিকাভুক্ত কেম্পানিতে ১৫ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়া, পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সবার ওপর একই কর আরোপ করা, গেইন টেক্স ৫ শতাংশ করা এবং ৪০ শতাংশ ভ্যাট রাখা। প্রস্তাবনাগুলো দিয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব র্বোডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। একই কপি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) পাঠানো হয়েছে।

আশা করা হচ্ছে, সরকার যদি প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে নেয়, তাহলে দেশের পুঁজিবাজার গতিশীল হবে। এ খাত থেকে অনেক বেশি অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে সরকার। অনেক সরকারি প্রকল্প পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। আর এ ফান্ড সরকারের উন্নয়নে কাজ করবে। যা সরকারের ভিশন ২০২১ অর্জনে সক্ষম হবে।

উল্লেখ্য, এর আগের বছর সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলো বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

প্রস্তাবনার শীর্ষে কালো টাকা সাদা
অপ্রর্দশিত অর্থ (কালো টাকা) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিতে অনেক টাকা করের আওতার বাইরে রয়েছে। অপ্রদশিত অর্থের মালিকরা উৎপাদনশীল খাতে এ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন না। এর ফলে দেশের অনুৎপাদিত খাতের পাশাপাশি অবৈধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

তাই রেগুলেটরি বডির কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।
 
মার্জিন লোনের প্রতিষ্ঠানের সুদ বাতিল
অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ নেগেটিভ ইক্যুইটিতে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টগুলোর সুদ মওকুফ করেছে। তারপরও এ অ্যাকাউন্টগুলো আন রিয়েলাইজেবল (অনাদায়যোগ্য সুদ) রয়েছে। কিন্তু আন রিয়েলাইজেবল ইন্টারেস্টের ওপর কর দিতে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে সরকারের বিশেষ প্রনোদণার অর্থ থেকে দেওয়া গ্রাহকের সুদ মওকুফের টাকার ওপর ‘ওয়েব ইনকাম ইন্টারেস্ট’ কর দিতে চাপ দিচ্ছে এনবিআর। এছাড়াও মার্জিন লোনের ক্ষেত্রে যে খরচকে রাইট আপ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়া
বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কর রেয়াতে সুবিধা পায়। এ সুবিধা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ পাবে। এতে সরকারও আরো বেশি রাজস্ব পাবে।

মার্কেট মেকারদের সমান কর আরোপ
পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান (মার্কেট মেকার) ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। বর্তমানে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ হারে কর সুবিধা নিচ্ছে। অথচ পুঁজিবাজারের জন্য একইভাবে অবদান রাখা ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৩৭ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। তাই সবার জন্য সমান অর্থাৎ ১৫ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিংবা তালিকাভুক্ত নয় সব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সমান রয়েছে। তাই বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির চেয়ে ৪০ শতাংশ ভ্যাট সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ওপর ১০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন টেক্স রয়েছে, যা কামিয়ে ৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।