চট্টগ্রাম থেকে: একি, প্রথমবারেই ইতিহাস! তাও আবার বিশাল ব্যবধানে। যে দলটি দেশের কোনো পেশাদার লিগে সাড়াই ফেলতে পারেনি, সেই চট্টগ্রাম আবাহনীই কিনা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ফুটবলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে!
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টুর্নামেন্টের আয়োজক ক্লাবটি।
ঐতিহাসিক এ জয়ে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। অনেকেই বলাবলি করছেন, গ্রুপ পর্বে হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে দলটি।
সত্যিই তাই করে দেখিয়েছে তারা। ঘরের মাঠে ৯০ মিনিটের উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় টুর্নামেন্টের অপরাজিত ভারতের কিংফিশার ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে বধ করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। জোড়া গোল করেছেন এলিটা কিংসলে। অন্য গোলটি এসেছে হেমন্ত ভিনসেন্টের পা থেকে।
টুর্নামেন্টের শুরুতে গ্রুপ পর্বে ২-১ গোলে হেরে যেন থমকে গিয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম মানিকের শিষ্যরা। কিন্তু মানসিক শক্তি আর কৌশলী হয়ে গ্রুপ পর্বের পরবর্তী খেলায় জয় পান তারা।
ফাইনালে খেলা নিয়ে নিজেদের সেই শক্তির কথাই বারবার বলছিলেন মানিক।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দোড়গোঁড়ায় এসেছি। তাই সেই মানসিক শক্তিকে পুঁজি করে শেষ ভালোতে যেতে চাই আমরা। ’
‘নিজের লেকিংসগুলো অনেক গুছিয়ে নিয়েছি। ফাইনালটা জিতে চট্টগ্রামবাসীকে একটা উপহার দিতে চাই,’ বলছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী প্রধান কোচ মানিক।
কথার সূত্র ধরে শেষ ভালোতে পৌঁছেও গেলেন তারা।
অন্যদিকে দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়ে বেশ প্রত্যয়ী ছিলেন অধিনায়ক জাহিদুল ইসলাম এমিলিও।
তিনিও বলেছিলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি আমরা। তাই শিরোপা হাতছাড়া করতে চাই না। ’
ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে যেন তার সেই কথা রেখেছেন তিনি। চমক দিয়েছেন চট্টগ্রাম তথা পুরো দেশবাসীকে।
এদিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় যেন নতুন প্রাণ পেল চট্টগ্রামের ফুটবলও। উল্লসিত গ্যালারি উপচেপড়া দর্শকও। ম্যাচ শেষে উল্লাস আর উৎসবে মেতে উঠেছেন তারা।
অথচ এ গ্যালারিকেই শুরুর দিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত স্মরণীয় এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল টুর্নামেন্টের আয়োজক দলটি। হাসি মুখেই জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
তারা বলছেন, ঘরের টুর্নামেন্টে স্বাগতিক দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমরা বেশ উল্লসিত ও গর্বিত। আমরা চেয়েছিলাম টুর্নামেন্টের ট্রফিটা ঘরেই থাক।
বন্ধুদের নিয়ে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এসেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান ইসলাম। হাজারো দর্শকের সঙ্গে তিনিও বেশ উল্লসিত।
বললেন, সেমিফাইনালে জয়ের পরপর আমাদের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল ট্রফি চট্টগ্রাম আবাহনীরই থাকবে। আর তা মাঠের নৈপুণ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন খেলোয়াড়রা।
‘জয়টা শুধু চট্টগ্রাম আবাহনীর নয়, এটা বাংলাদেশেরও জয়। আমি মনে করি এই জয়ে দেশের মানুষের হারানো ফুটবল উন্মাদনা আবার ফিরে আসবে,’ আদনানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললেন তার বন্ধু তানিম।
এদিকে বেশ প্রফুল্ল বিজয়ী ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের ফুটবল চেয়ারম্যান তরফদার রুহুল আমিন।
বলেন, আমরা বেশ উদ্যমী ছিলাম। জয় নিয়ে ঘরে ফেরায় সব পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।
সর্বোপরি বলা যায়, এই জয় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে।
দেশের পেশাদার লিগ কিংবা বড় বড় দল যা করতে পারেনি, আলোচনার বাইরে থেকে চট্টগ্রাম আবাহনী তা করে দেখালো।
অভিনন্দিত তো তাদের করতেই হয়। অভিনন্দন মানিকের শিষ্যদের, অভিনন্দন এমিলিকে, কথা রাখার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
এমএ/টিসি/জেডএস
** শিরোপা হাত ছাড়া করতে চান না এমিলি