শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) লা লিগার ম্যাচে ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে ‘অ্যাটাকিং ট্রায়ো’র জাদুতে রিয়াল মায়োর্ককে ৫-২ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা। এই জয়ে ফের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ফিরল কাতালান জায়ান্টরা।
রেকর্ড ষষ্ট ব্যালন ডি’অর জেতার পর এই প্রথম মাঠে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। ক্লাবের সর্বকালের সেরা তারকাকে অভিনন্দন জানাতে গ্যালারি ছিল ‘ফুল হাউস’। হাজির ছিল মেসির পরিবারও। ম্যাচ শুরুর আগে মেসির তিন গর্বিত সন্তান বাবার ব্যালন ডি’র ট্রফি নিয়ে মাঠে হাজির হলো। সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ব্যালন ডি’অর হাতে হাজারো দর্শক-সমর্থকদের অভিবাদনের জবাব দিলেন ‘কিং মেসি’। পুরো স্টেডিয়াম তখন তুমুল করতালি আর উল্লাসে মত্ত। তখনও ক্যাম্প ন্যু’র দর্শকরা জানেই না, সামনে তাদের জন্য কত দুর্দান্ত পুরস্কার অপেক্ষা করছে।
পুরো ‘পার্টি মুডে’ থাকা ক্যাম্প ন্যুকে প্রথম উদযাপনের উপলক্ষ অবশ্য এনে দেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান। মজার ব্যাপার হলো এই গোলের অ্যাসিস্ট করেছেন খোদ বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে-টের স্টেগান। ম্যাচের মাত্র ৭ম মিনিটে কর্নার থেকে অল্পের জন্য গোল মিস করে মায়োর্কা। তবে চমকটা তখনই দেখালেন টের-স্টেগান। বল ধরেই এমন এক গোল কিক করে বসলেন যে মায়োর্কার প্রায় সব খেলোয়াড় তখন বার্সার অর্ধে। টের-স্টেগানের লম্বা গোল কিক ধরে একাই দৌড়ে গিয়ে প্রতিপক্ষের মরিয়া গোলরক্ষক রেইনার ওপর দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
১৫তম মিনিটের মাথায় সার্জিও বুসকেতসের শক্তিশালী হেড ঠেকিয়ে দেন মায়োর্কা গোলরক্ষক। এর দুই মিনিট পরেই জাদুর ঝাঁপি খুলে বসেন মেসি। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের সামনে বল পেলেই তা থেকে গোল আদায় করাকে প্রায় নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। এই ম্যাচেও ঠিক তাই করলেন। গ্রিজম্যানের কাছ থেকে পোস্ট থেকে ২৫ গজ দূর থেকে অনেকটা ফ্রি-কিকের মতো বাঁকানো শট নিলেন তিনি। আর বল রেইনাকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়িয়ে গেল।
চাপে পড়ে যাওয়া মায়োর্কা প্রথমার্ধে একবারই সুযোগ পেয়েছিল। আর ৩৫তম মিনিটে পাওয়া সেই সুযোগ থেকে সবাইকে চমকে দিয়ে গোল করে বসেন আন্তে বুদিমির। ল্যাঙ্গলেটের ব্যর্থতার পর টের-স্টেগানের পক্ষে এই গোল ঠেকানো ছিল প্রায় অসম্ভব। তবে নিজের ‘বিশেষ’ রাতে সব আলো কেড়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলেন মেসি।
৪১তম মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক রচনা করে বার্সা। সুয়ারেস আর ইভান রাকিতিচ পরস্পরের সঙ্গে বল বিনিময় করে মেসির জন্য শট নেওয়ার পথ করে দেন। এবারও নিজের প্রথম গোলের মতোই বাঁ পায়ের ‘ফ্রি-কিক’ সদৃশ্য শট নিয়ে গোলবারের দূরের পোস্টে বল জড়িয়ে দেন বার্সা অধিনায়ক।
মেসি জাদুতে মুগ্ধ দর্শকদের সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছেন সুয়ারেস। ছোট ছোট পাসে দারুণভাবে গড়ে তোলা এক আক্রমণ নিয়ে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ে বার্সার আক্রমণভাগ। ডি-বক্সের ভেতরে আচমকা ফ্রেঙ্কি ইয়ং ছোট এক পাসে বল পাঠিয়ে দেন সুয়ারেসের দিকে। কিন্তু গোলমুখে ফেরার বদলে অবিশ্বাস্য এক ব্যাক হিলে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকে বোকা বানিয়ে দিলেল উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। আসলে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, ঠিক কত দুর্দান্ত ছিল এই গোল।
৪-১ ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যাওয়া বার্সা দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করে বসেন মায়োর্কার বুদিমির। পোস্টের একদম কাছ থেকে নেওয়া তার হেড ঠেকানোর কোনো সুযোগই পাননি টের-স্টেগান। তবে ম্যাচের বাকি সময়ে বেশকিছু দুর্দান্ত সেভ করেছেন এই জার্মান গোলরক্ষক।
মেসির শেষ জাদুর দেখা মিলল ম্যাচের শেষ মুহূর্তে। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে দারুণ বোঝাপড়ার নজির দেখিয়ে আলতো পাস দেন সুয়ারেস। আর তা থেকে বাঁ পায়ের বুলেট গতির শটে চলতি মৌসুমে নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের দেখাও পেয়ে যান মেসি। এই নিয়ে চলতি মৌসুমে লা লিগায় মাত্র ১০ ম্যাচ খেলেই ১২তম গোল হয়ে গেল তার। সেই সঙ্গে পিচিচি ট্রফি’র লড়াইয়ে রিয়াল মাদ্রিদের করিম বেনজেমাকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। লা লিগায় রোনালদোকে (৩৪টি) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের মালিকও এখন মেসি (৩৫টি)।
ম্যাচ শুরুর আগে ব্যালন ডি’অর জয়ের উদযাপন আর শেষে হ্যাটট্রিক এবং দলের বিশাল জয়। আর কী চাই মেসিভক্তদের!
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
এমএইচএম/টিএ