ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বদলে যাচ্ছে কুয়াকাটার চিরচেনা রূপ

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
বদলে যাচ্ছে কুয়াকাটার চিরচেনা রূপ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে ফিরে: একদিকে পদ্মাসেতু অন্যদিকে পায়রা সেতু- এ দুইয়ের কল্যাণে বদলাতে শুরু করেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার চিরচেনা রূপ।  

শুধু ছুটির দিনে নয়, এখন সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে কুয়াকাটা।

পর্যটন মৌসুম শীত শেষ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে কুয়াকাটাকে বেছে নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ও বুধবার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার এ পর্যটন শহর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

মধ্যরাত থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা সরাসরি বাসে এসে নামতে শুরু করেন কুয়াকাটায়। কোনোমতে নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছে ড্রেস চেঞ্জ করেই তারা চলে যান সমুদ্র সৈকতে। এরই মধ্যে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক বা ভ্যানওয়ালা এসে হাজির হন পর্যটকদের কাছে। প্রস্তাব দিতে থাকেন, সূর্যোদয় দেখতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতীর চরে যাওয়ার। কেউ কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ বা ইজিবাইকে কিংবা ব্যাটারি চালিত ভ্যানে করে যান নয় কিলোমিটার দূরের গঙ্গামতীর চরে। সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখে সবাই ফিরে আসেন কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে। এরপর সকালের নাস্তা শেষে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে মেতে ওঠেন জলকেলিতে।  

কেউ ছবি তোলেন, কেউ দৌড়াদৌড়ি, কেউ বা সৈকতের বালুতে লিখতে শুরু করেন প্রিয়জনের নাম। যতক্ষণ সম্ভব সমুদ্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান পর্যটকরা। পরে গোসল সেরে আবার বেরিয়ে পড়েন পাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে। এর মধ্যে রাখাইন পল্লী, রাখানই মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির, সংরক্ষিত দুইশ বছর আগের নৌকা, লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন ও শুঁটকি পল্লী অন্যতম। তবে দুপুরের আগে রাখাইন পল্লী, রাখানই মার্কেট ও বৌদ্ধ মন্দির ও সংরক্ষিত দুইশ বছর আগের নৌকা এবং বিকেলে লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন ও শুঁটকি পল্লী ভ্রমণ করতেই পছন্দ করেন বেশির ভাগ পর্যটক। বিকেলে এসব দর্শনীয় স্থান দেখে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই সবাই প্রস্তুত হয়ে যান সূর্যাস্ত দেখতে।  

এরপর সন্ধ্যায় কেউ ব্যস্ত থাকেন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মার্কেটে কেনাকাটায়। কেউ বা মেতে ওঠেন অক্টোপাস, স্কুইডসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ-প্রাণী ফ্রাই বা বারবিকিউ পার্টিতে। সেই সঙ্গে রয়েছে সমুদ্র সৈকতের মকটা চা। এভাবেই ব্যস্ততম একটি দিন কেটে যায় পর্যটকদের।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দর্শনে আসা শাহিন বিল্লাহ বলেন, সাত/আট বছর আগে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম। কিন্তু তখন ভ্রমণটা আনন্দের চেয়ে ভোগান্তির ছিল বেশি। সেবার পথে কয়েকটি ফেরি পার হতে গিয়ে সব গোলমাল হয়ে যায়। পদ্মা ও পায়রা সেতু হওয়ায় দীর্ঘ বিরতির পর আবার কুয়াকাটায় এসেছি। এবার ভ্রমণটা অসাধারণ স্বস্তিদায়ক ছিল। আসতে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি, যেতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না আশা করছি।

খুলনা থেকে আসা তানভীর আহমেদ বলেন, কুয়াকাটায় আসাটা এখন খুবই সহজ। বাসে উঠলেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কুয়াকাটা। এজন্য স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চলে এলাম।

কুয়াকাটার হোটেল রোজ গার্ডেনের ম্যানেজার জাহিদ বলেন, এখন কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ বাড়ছে। আগে শুধু পর্যটন মৌসুম বা ছুটির দিনে পর্যটকরা এলেও এখন সব সময়ই পর্যটকের চাপ রয়েছে।

কুয়াকাটা পৌরশহরের ইজিবাইক চালক নাইম বলেন, আগে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যটকের আনাগোনা ছিল। তখন কিছুটা আয় হতো। অন্যান্য সময় পর্যটকরা না আসায় আয় হতো না বললেই চলে। কিন্তু এখন এখানকার পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল সবার আয় বেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।