সাতক্ষীর থেকে: মনিরা ও আকলিমা, দুই বান্ধবী। সুন্দরবনের নদী খোলপেটুয়া পাড়ের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনীমূখা গ্রামে দেখা মনিরা ও আকলিমার সঙ্গে।
নদী পাড়ে নিজেদের মাটির ঘর লেপছিল দুই বান্ধবী মনিরা বেগম ও আকলিমা আক্তার। দুজনই চাঁদনীমূখা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
একাগ্র মনে পাক্কা সংসারী ভঙ্গিতে তারা লেপে চলেছেন মাটির ঘরের ডোয়া (মেঝের নিচের অংশ)। শীতের দিনেও ছোট্ট হাতে চলছে তাদের পানি, কাঁদামাটির কসরত। নেই কোনো অভিমান বা অনুযোগও।
মনিরার মা কোমলা বেগব (২৫) বলেন, অভাবের সংসার। বড় ছেলে সোহেল ও স্বামী হামিদ গাজী একটি ইটভাটার শ্রমিক। ভাটার কাজ থাকে ৬ মাস, আর ৬ মাস কাজ থাকে না। এলাকায়ও তেমন কাজ নেই। অভাবের সংসার, চলতে হয় খুব কষ্ট করে।
কোমলা বলেন, বাড়ির সমনের খোলপেটুয়া নদীতে মাঝে মাঝে মাছ ধরি। মাছ বেশি পেলে কিছু শুটকিও তৈরি করি।
‘অভাবের কারণে বড় ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পরিনি। তবে মেয়েটা স্কুলে যায়। এখন ছুটির সময়। তাই মনিরা ও পাশের বাড়ির আকলিমাকে সংসারের কাজ শেখাতে ঘরের ডোয়া লেপতে দিয়েছেন।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশের সবচেয়ে কাছের জনপদ গাবুরা ইউনিয়ন। নদী বেষ্টিত অপর সম্ভাবনাময় এই এলাকাটি এখনও পিছিয়ে সব দিক থেকে। নেই বিদ্যুৎ, পানি বা যোগাযোগের কোনো ভালো মাধ্যম। ফলে পিছিয়ে থাকা এই জনপদের বাল্যবিয়ের হারও অনেক বেশি।
কোমলা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। এখন তিন সন্তানের জননী।
আকলিমার মা রুপিয়া বেগমেরও বিয়ে অল্প বয়সে। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তিনি বলেন, দারিদ্র পিড়িত অঞ্চল হওয়ায় এখানে অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। অল্প বয়স থেকেই তাদের শিখতে হয় ঘর গৃহস্থালীর কাজ।
এই প্রস্তুতি তাহলে কী মনিরা-আকলিমার বাল্যবিয়ের সংকেত দিচ্ছে?
** পথে পথে বাংলার রং-রূপ
** ‘বাঘ’ থেকেই কি ‘বাগেরহাট’?
** মাজার মোড়ের চা-পানেই তৃপ্তি !
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এসআইএস/জিপি