এসব অসুবিধা দূর করে নিঝুম দ্বীপ ও হাতিয়াকে নিয়ে পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বানাতে বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরাও যেন ছুটে যান হাতিয়া হয়ে নিঝুম দ্বীপে, সেজন্য সরকার দ্বীপ দু’টিকে ঘিরে ইকো-ফ্রেন্ডলি (ঐতিহ্য-প্রকৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে) পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত এক প্রকল্পের আওতায় দ্বীপ দু’টি ঘিরে পর্যটকদের জন্য মানসম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পর্যটনের যাবতীয় সুবিধা, তথা ক্যাটারিং, পিকনিক শেড, কিডস কর্নার, বিনোদন পার্ক, ইয়ুথ ইন, কনফারেন্স হল, ওয়াচ টাওয়ার, কৃত্রিম লেক, রিভার ক্রুজ পরিচালনার জন্য ক্রুজ ভ্যাসেল, বার-বি-কিউ শেড, সার্ভিস ব্লক ইত্যাদি থাকবে এই দুই দ্বীপে। পুরো এলাকায় জোরদার করা হবে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাও।
৪৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে হাতিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ২ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে গেলে স্থানীয় জনগণের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা করা হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপ ঘিরে পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম একটি কেন্দ্র গড়তে চাইছে। নিঝুম দ্বীপ ঘুরে যেন পর্যটকেরা হাতিয়ায় উন্নত পরিবেশে থাকতে পারেন, খেতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কেওড়া, বাইন, গেওয়া বনের নিঝুম দ্বীপে ২২ হাজার চিত্রল হরিণের অভয়ারণ্য রয়েছে। নখরবিহীন উদবিড়াল, মেছো বিড়ালের পাশাপাশি এই দ্বীপে আছে নিশি বক, দেশি কানিবক, গোবক, দেশি পানকৌড়ি, ধূসর বক, বালিহাঁস, কালো হাঁস, কোড়া, তিলা লালগা, তিলা সবুজপা। রয়েছে গুঁইসাপ, নানা প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপও। সুযোগ-সুবিধা থাকলে এসব জীববৈচিত্র্য স্বভাবতই টানবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ উন্নয়নের মধ্যে একটা পর্যটনকেন্দ্রিক সংযোগ থাকবে। যেন নিঝুম দ্বীপ ঘুরে এসে হাতিয়ায় বিশ্রাম এবং খাওয়া-দাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারেন পযর্টকেরা। দ্বীপ দু’টিতে ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিকভাবে যে পরিবেশ আছে, তা ঠিক রেখেই গড়ে উঠবে ইকো-ফ্রেন্ডলি পর্যটনকেন্দ্র।
মিজানুর রহমানের বিশ্বাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপে পর্যটক বাড়বে কয়েক গুণ। মেঘনার শেষ প্রান্তে ফেনিল ঢেউয়ের মধ্যে ভাসমান হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপের নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের হাতছানি দেবে বারবার।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/