বিশেষ করে ছুটির দিনে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, উৎপাদিত ফসল বিক্রেতা অর্থাৎ কৃষক আর খুচরা-পাইকার ব্যবসায়ীদের হারিয়ে যেতে হয় পর্যটকদের ভিড়ে।
পর্যটকরা শুধু ভাসমান বাজারই ঘুরে দেখছেন না।
তবে এসব কিছু কাছ থেকে দেখতে হলে খাল ও নদী বেষ্টিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখতে নৌযানের বিকল্প নেই। দিনে দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এরইমধ্যে বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলী ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারকেন্দ্রিক ট্যুরিস্ট বোটের ব্যবসা জমে ওঠেছে।
শুধু নদীতে ভ্রমণই নয়, ভাসমান বাজার ঘিরে গড়ে ওঠেছে নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। আবার আটঘর-কুড়িয়ানায় দেখা না গেলেও ভিমরুলীতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় প্রতিনিয়ত।
ভিমরুলীতে ভাসমান বাজারে ঘুরতে আসা ইমরান নামে এক পর্যটক জানান, বছর দুয়েক আগে যখন এসেছি, তখন ভাসমান বাজার বা আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে কৃষক বা চাষিদের নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। আর যদি দু’একটি ট্রলারও পাওয়া যেতো, তবে তাদের চালকদের ম্যানেজ করতে বেশ বেগ পেতে হতো। কারণ তারা বাজারের পণ্য নেওয়ার কাজেই ব্যস্ত থাকতো। আর এখন পর্যটকদের জন্য এখানে যেমন ট্রলার রয়েছে, তেমনি রয়েছে দ্বার টানা নৌকাও।
সুস্মিতা নামে এক কলেজছাত্রী জানান, শুধু ভিমরুলীতে নয়, আটঘর-কুড়িয়ানায়ও রয়েছে পর্যটকদের জন্য আলাদা নৌকা ও ট্রলারের ব্যবস্থা। আর নৌযানগুলোর মাঝিরা স্থানীয় হওয়ায় তারাও পেয়ারা-আমড়ার বাগানসহ আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘুরিয়ে দেখান খুব সুন্দরভাবে। আর আটঘর-ভিমরুলী পাশাপাশি হওয়ায় দু’টি এলাকাই ঘুরে দেখা যায়।
এদিকে, আগের থেকে ভাসমান বাজারকেন্দ্রিক নতুন নতুন খাবারের দোকান গড়ে ওঠাকে স্বাগত জানিয়ে সালাউদ্দিন নামে এক পর্যটক বলেন, আগে আটঘর-কুড়িয়ানা আর ভিমরুলীতে হাতে গোনা কয়েকটি খাবারের দোকান ছিল। ভাসমান বাজারের বিলাসিতা দেখতে হলে এসব এলাকায় খুব সকালে আসতে হয়। কিন্তু আটঘর-কুড়িয়ানা হয়ে ভিমরুলীতে ঘুরতে গেলে প্রায়ই খাবার খেতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। তবে বাড়তি দোকানের কারণে এ সমস্যা এখন আর হয় না।
যদিও পর্যটকের সংখ্যা না বাড়লে এর তেমন কোনো প্রয়োজন হতো না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণার কারণে দিনে দিনে এ এলাকাগুলো দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আটঘর-কুড়িয়ানার বাসিন্দা উজ্জ্বল জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে এ অঞ্চলে। গত বছর থেকে এবার বর্ষার শুরুতেই প্রচুর পর্যটক আসছে ভাসমান বাজারগুলোতে। যারমধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। নিয়মিত পর্যটকদের কারণে এখানে এক ধরনের পর্যটন ব্যবসা গড়ে ওঠছে। নতুন নতুন খাবারের দোকান, পর্যটকদের আশপাশের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য নৌকা ও ট্রলার ভাড়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রলার মাঝি রাসেল জানান, আগে বেকাররা ঘোরাঘুরি করতেন। কিন্তু এখন আটঘর-কুড়িয়ানা আর ভিমরুলীতে পর্যটকদের ঘুরিয়ে বেশ ভালোই আয় করছেন। যে কাজে প্রতিনিয়ত নতুনরা যুক্ত হয়েছেন। অনেকে তো ভাগ্য ভালো থাকলে বিশেষ বিশেষ দিনে হাজার টাকার ওপরেও আয় করছেন।
আর পর্যটকদের এ অঞ্চলে আসাকে স্বাগত জানালেও চাষিরা ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত বোট চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি। বেপরোয়া গতিতে চালনায় প্রায়ই ফসল নিয়ে খালে চলাচলরত ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলোকে বিপদে পড়তে হয়।
অপরদিকে ঘুরে দেখার নামে অনেক পর্যটকই না বলে ক্ষেত থেকে পেয়ারা-আমড়া ছিঁড়ে খাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। যা নিয়ে আটঘরে হট্টগোল বাধার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক রতন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৯
এমএস/আরবি/