দিন ১১
জয়পুরহাট-নওগাঁ (৩৯.৮০ কিমি)
সকালে ঘুম ভাঙলো সাজু ভাইয়ের দুই বছর বয়সী ছেলে সাফির 'আংকেল, আংকেল' হাঁকডাকে। এই পরিবারের লোকজন একদিনেই এত আপন হয়ে গেছে যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতেই মন খারাপ হচ্ছে।
খেজুরতলী পার হয়ে পড়লো জামালগঞ্জ চারমাথা৷ এখান থেকে ডানের রাস্তাটা গেছে সোজা সোমপুর বিহারের দিকে। ওদিকে আমি আগেও বার দু’য়েক গিয়েছি বিধায় সোজা পথ ধরলাম। প্রচুর ইপিল ইপিল গাছ এদিকে। চকবিলা থেকে রাস্তার সমান্তরালেই রেললাইন। রাস্তার পাশের নরম ঘাসে পা ডুবিয়ে হাঁটছি। বিশাল সব শনগাছ দু'ধারে। হালির মোড় পেরিয়েই নওদুয়ারীবাজার। আক্কেলপুর পৌরসভার গেট পেরিয়ে আক্কেলপুর পৌঁছে গেলাম সাড়ে ১০টা নাগাদ।
রেলস্টেশনের মোড়ে এসে পেলাম এভালাঞ্জ (বরফ ধস) টেইলার্স। বেশ অবাক হলাম এই নাম দেখে। এই সবুজের দেশে বরফ ধস নামক দর্জির দোকান!আক্কেলপুরেই অপেক্ষা করছিলেন বগুড়ার সায়হাম ভাই। গতকালের মতো আজও উনি মাঝপথ থেকে যোগ দিয়ে বাকিটা পথ হাঁটবেন। রেললাইন ঘেঁষা রাস্তা ধরেই পথ। এই পথটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে এগিয়েছে। দু'ধারে অর্জুন গাছের সঙ্গে ফসলি গাছও চোখে পড়লো। পেয়ারা আর আম গাছের সংখ্যাই বেশি। দারুণ ছায়া মিলছিল দেখে বেশ দ্রুতই এগোচ্ছিলাম। খানিক বাদেই হাতের বামে দেখা গেলো তুলসী গঙ্গা নদী। শ্রীরামপুর বাজার থেকে শুরু হয়ে গেলো নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা। একটু পরেই শুরু হলো মাটির রাস্তা।
শর্মাপুরেই চোখে পড়লো লাল ইটে তৈরি সুন্দর একটা ঈদগাহ। মেশিনে ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য দেখলাম বিলাশপুরে। কানুপুর পার হতে হতেই পেটে প্রচণ্ড খিদে। ভাতের হোটেলের সন্ধানে দু'চোখ খোলা রাখছি। ত্রিমোহনীতে ভাত না পেয়ে তার পরিবর্তে ডিম-রুটি খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। চকনদীকুল, আদম দুর্গাপুর যেতেই প্রচুর মাটির বাড়ি নজর কাড়ছিল। শান্তির মোড় থেকে রাস্তা বেঁকে গেছে ডানে। সুখধানী নামক ছোট্ট একটা পার্কের পাশ থেকে সঙ্গী হিসেবে পেলাম ছোট যমুনা নদীকে। বড় যমুনাকে আগে দেখার সৌভাগ্য হলেও ছোট যমুনাকে চাক্ষুষ দেখা এই প্রথম। সায়হাম ভাইয়ের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে গল্পে গল্পে পথ চলছি। নদী কখনো পথের ডানে, কখনো বা বামে। হাতের বামে মোড় নিতেই বিশাল মুলা ক্ষেত। কাদোয়া হয়ে দেবীপুর মোড় পৌঁছে গেলাম খানিকপরেই। মহাসড়কের কাছের এক দোকানে চা পান করছিলাম। আরটিভির রিপোর্টের সুত্রধর মিঠু নামের মাঝবয়সী এক লোক কীভাবে জানি চিনে ফেললো। জোরাজুরি করে চায়ের বিল দিয়ে বললেন, 'আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন আর আমি সামান্য চায়ের বিল দিতে পারবো না? এইটুকু আমাকে করতে দেন। ' সায়হাম ভাই এটা নিয়ে হালকা পচানি দিলেও আমি গায়ে মাখালাম না খুব একটা।
খলিশাকুড়ি পার হতেই ছোট যমুনার ব্লকবাঁধা পাড় দেখতে পেলাম। পাড়ে বসেই প্রচুর লোক ছিপ ফেলে মাছ ধরছে। মাছ ধরার কাজটা সব সময়ই আমার অসীম ধৈর্যের কাজ মনে হয়। কখন কবে কোন একটা মাছ দয়াপরবশ হয়ে একটা ঠোকর দেবে তার আশায় দিনমান পানির পানে চেয়ে থাকা বড্ড কষ্টের কাজ! বিজিবি ক্যাম্প পেরিয়ে পড়লো উকিল পাড়া। পাশেই ডাক্তার পাড়া নামে আরেকটা পাড়া। পেশার নামেই দেখি সব পাড়ার নাম! একটু এগিয়েই দেখলাম নওগাঁ টেনিস ক্লাব।
এইরকম একটা জেলা শহরে টেনিস ক্লাব বেশ চমকপ্রদ। উঁকি দিয়ে দেখলাম অল্পবয়সী অনেকেই দারুণ মনোযোগের সঙ্গে খেলছে। সোনাপট্টি পেরিয়ে তুলাপট্টিতে ইউসিবি ব্যাংকটা পেয়ে গেলাম বিনা ঝামেলায়। ব্যাংক ম্যানেজার সেলিম ভাই আমাদের আরিফ ভাইয়ের বন্ধু। ওনার বাসাতেই আজকের রাত্রিযাপন। সেলিমভাই তার অফিসের সব কলিগকে এক জায়গায় জড়ো করে আমাকে সুযোগ করে দিলেন আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য বলার। ব্যাংকের অফিসাররা কথা দিলেন আজ থেকে যথাসম্ভব কম ব্যবহার করবেন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক।
এর মধ্যেই ব্যাংকেই দেখা করতে এলো আমার বোনের সহপাঠী ও বর্তমানে নওগাঁর সহকারী বিচারক জিয়া আর জুবায়ের ভাই। বেশ খানিকক্ষণ গল্প করে ওরা বিদায় নিতেই সেলিম ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে যেতে যেতে শুনছিলাম নওগাঁর গল্প। সেলিম ভাই জানালেন এই শহর হলো পট্টির শহর। সারপট্টি, তুলাপট্টি, মিষ্টিপট্টি, কাপড়পট্টি, সোনাপট্টিসহ নানান পট্টিতে ভরপুর এই নওগাঁ।
চলবে...
আরও পড়ুন>>
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
এএ