দিন ২৯
আখড়াঘাট বাজার (রাজনগর, মৌলভীবাজার)-মৌলভীবাজার-কুচার মহল (মৌলভীবাজার)= ৩১.৪৮ কিমি
কাল রাতের অন্ধকারে হাওর দেখেছিলাম। সকালে রাউফ ভাই একটু ঘুরপথে নৌকার ঘাটে নিয়ে গেলেন বলে দিনের আলোতেও হাওর দেখাটা কপালে জুটলো।
খেয়া নৌকায় কুশিয়ারা পার হয়ে ওপাশে মীরগঞ্জ বাজার। এখানেই বাইকের জন্য অপেক্ষা। বাইকেই কাল যেখানে শেষ করেছিলাম সেখানে পৌঁছে হন্টন শুরু করবো। রাউফ ভাইয়ের বাড়ি নদীর ওপারে হলেও সেতু না থাকায় বাইক রাখতে হয় এপারে। একটি সেতুর জন্য লোকের যে কত ঝামেলা পোহাতে হয়। বাইকে চেপে বসে অল্প যেতেই হাওরতলা নামক গ্রাম। সকালের ফাঁকা রাস্তায় কিছুক্ষণের মধ্যেই আখড়াঘাট বাজার।
পদযুগলের উপর নির্ভরতা এখান থেকেই শুরু। ছোটখাট কয়েকটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কামালপুর বাজার। বাঁধবাজার ছাড়াতেই বিভিন্ন চা বাগানের সাইনবোর্ড নজরে আসছিল। প্রথমেই পড়লো ১৮৯৬ সালে স্থাপিত উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগানের ফলক। আরো বেশকিছু ফলকে চোখ রাখতে রাখতেই একে একে পেরোলাম ছোয়াব আলী বাজার, ধামইরপার, গয়াসপুর। হাওর অঞ্চলে মহিষ পালনের নির্দেশাবলী সংবলিত সাইনবোর্ড রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সেসবে চোখ বোলাতে বোলাতে মুন্সির বাজার। মুশুরিয়া থেকে নন্দীউড়ার রাস্তায় প্রচুর কড়ই আর আকাশমণি গাছ। মূল রাস্তা থেকে যেসব ছোটরাস্তা গ্রামের দিকে এগিয়েছে সেগুলোতে অবশ্য প্রাধান্য আকাশমণি গাছেরই।
চৌধুরীবাজারের কাছে রাস্তা পারাপারের সময় মরে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া সাপের দেহাবশেষ দেখলাম। এরকম দৃশ্য অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ছে। সাপ ছাড়াও ব্যাঙ আর চিকার দেহাবশেষের দেখা মেলে প্রায়শই। সকাল থেকেই মহাসড়ক ধরে চললেও কর্ণিগ্রামের কাছে হাইওয়ে ছেড়ে ভেতরের রাস্তা নিলাম। এই রাস্তা রাজনগর উপজেলা সদর ছুঁয়ে কিছুদূর এগিয়ে আবার উঠেছে মহাসড়কে। সদরের কেন্দ্রে আছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। বেশ পরিচ্ছন্ন এর প্রাঙ্গণটি। গোবিন্দবাটি বাজারের কিছুটা আগে আবার মহাসড়কে। মহলাল বাজারের পরেই আচরা কাপন। সিলেট অঞ্চলের অনেকগুলো জায়গাতেই কাপন নামটা দেখতে পাচ্ছি। আচরা কাপন থেকে বামে মোড় নিয়ে আবার মহাসড়ক ছাড়লাম। মরা খালের পাশের ছোট একটা রাস্তা ধরেই পথচলা। সাকুল্যে ফুট চারেকের পিচ রাস্তাটা একটু পরেই মাটির রাস্তা হয়ে গেলো৷ মাটির রাস্তা হওয়াতেই সম্ভবত এটা খানিকটা প্রশস্ত।
কিছুদূর যেতেই হাতের বামে পড়লো মনু নদী। এই নদীর উপরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের মনু ব্যারেজ। ব্যারেজের বাম দিকে নদীতে পানির পরিমাণ কম। পাড়ে মাটি তুলতে এসেছে বেশকিছু ট্রাক। অপেক্ষাকৃত বেশি পানি ব্যারেজের ডানদিকে।
ড্রিমস শিশু পার্কটা একেবারেই মনু ব্যারেজ লাগোয়া। শুক্রবার বলেই কচি-কাচাদের ভিড়। দনাশ্রীর পরে মনু নদী চলে এলো ডানদিকে। মাটির রাস্তাটা খানিকটা সরু হয়ে এসেছে এখানটায়। গুগল ম্যাপ হাঁটাপথের যে রাস্তা জানান দিচ্ছে সেখানে গিয়ে দেখি কেউ একজন বেড়া দিয়ে সেটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে৷
আশেপাশের লোকের কাছ থেকে পথের দিশা জেনে খানিকটা ঘুরপথেই এগোতে হলো। হামহামির ছড়ার উপরের সেতু দিয়ে সমশের নগরের রাস্তায়। এর মধ্যেই ফরহান ভাইয়ের ফোন। মৌলভীবাজার হাফম্যারাথনে অংশগ্রহণ করতে ওনারা এসেছেন। সঙ্গে আছে জিতু আর মনির ভাই। পানসী রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছেন সবাই।
মাইজপাড়া, চৌমুহনা হয়ে পানসীতে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। পানসী তখন গমগম করছে ম্যারাথন দৌড়াতে আসা রানারদের হাঁক-ডাকে। ফরহান ভাই, জিতু আর মনির ভাই এই ম্যারাথনে এখনো পর্যন্ত নিজেদের বেস্ট টাইমিংয়ে দৌড়ানোতে তিনজনই বেশ খোশমেজাজে। বিশেষ করে ফরহান ভাই পায়ের ব্যথা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। গত সপ্তাহে আমার সঙ্গে তিনদিন হেঁটে চট্টগ্রাম ফেরার সময় সঙ্গী হয়েছিল পায়ের ব্যথাটা।
দুপুরে সাধারণত আমি খুব বেশি খাই না। বেশি খেয়ে নিলে হাঁটতে কষ্ট হয়৷ আজ সবাইকে একসঙ্গে পেয়েই সম্ভবত ব্যতিক্রম হলো। নানান ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভরপেট খেলাম। এরমধ্যেই শুভদার ফোন। মাহমুদা আপুর সূত্রেই ওনার সঙ্গে ফোনালাপ। ঈদগাহের কাছে আসতেই শুভ দা আর তার দুই ছোট ভাই চলে এলেন। হাতে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ফুল।
ফরহান ভাই, জিতু আর মনির ভাই ফিরবেন শ্রীমঙ্গলে। ওনাদের সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে আমরা মূল শহরের দিকে এগোলাম। চায়ের ফাঁকে বেশ খানিকটা আড্ডা দিয়ে আবার হাঁটা শুরু। খুব বেশিদূর এগোবার ইচ্ছে নেই অবশ্য। এই শহর আমার ভালোই চেনা। মাস দুয়েক আগে এসেও পায়ে হেঁটে এদিক-সেদিক ভালোই ঘুরেছিলাম। বেরীর পাড় হয়ে চলে এলাম কুসুমবাগ। বড়কাপন, যোগীডহর হয়ে কুচারমহলে এসে শেষ করলাম আজকের হাঁটা।
মোড়ের দোকানটায় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতেই আলাপ হলো স্থানীয় দুজনের সঙ্গে। ওনাদের পীড়াপীড়িতে আরো দুই কাপ চা শেষ করতে হলো। এর মধ্যেই প্রিয়াংকা দিদিরা ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে কাছাকাছি চলে এসেছেন। সদর হাসপাতালের সামনে আসতেই তীর্থ দা বললেন সরাসরি বাসায় চলে আসতে।
সদর হাসপাতালের বিপরীত দিকের মোস্তফাপুর আবাসিকের দাদা-দিদির বাসায় আমি আগেও এসেছি। দু’জনেরই কর্মস্থল এই সদর হাসপাতাল। বাসায় ঢুকেই দেখা শ্রেয়ান আর তিস্তার সঙ্গে। শ্রেয়ানটা দিন দিন বড়ই হয়ে যাচ্ছে। আসার পর থেকেই শ্রেয়ানের নানান জিজ্ঞাসা। কোথায় থাকি, কি খাই এসব নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই ওর। এই যাত্রায় ইতো মধ্যেই দু’বার তিস্তার সঙ্গে দর্শন হলো। লালমনিরহাটে আবহমান কাল থেকে বয়ে যাওয়া তিস্তা আর মৌলভীবাজারে দাদা-দিদির কোলজুড়ে আসা মাস তিনেকের তিস্তা৷
চলবে...
আরও পড়ুন...
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এএ