দিন ৪৩
গোপালপুর চৌরাস্তা (কেশবপুর, যশোর)-খুলনা= ৪৬.৭৮ কিমি
সকালটা শুরু হলো কপোতাক্ষ নদের মোহনীয় রূপ দেখে। গতকাল হাঁটা শেষ করেছিলাম কলারোয়া হয়ে কেশবপুরের গোপালপুরে।
সোহেল ভাই পেছন পেছন বাইকে। আমরা ধরলাম মঙ্গলকোটের রাস্তা। খুব বেশিদিন আগের তৈরি রাস্তা নয় এটি। দুপাশে তেমন কোনো গাছ নেই। এই গ্রামের নাম ভালুকঘর। গ্রামের এক বাড়ির উঠোনে রস জ্বাল দেওয়ার আয়োজন চোখে পড়লো। আজ আকাশের মুখ খানিকটা গোমড়া। বিশাল এক কালো মেঘ ক্ষণে ক্ষণে ঢেকে দিচ্ছে সূর্যকে। গণি মোড়ের কাছাকাছি এসে বিদায় নিলেন সোহেল ভাই আর নিসর্গ।
শুক্রবার সকাল। জনজীবনের চলার গতি বেশ শ্লথ আজ। শিকারপুর বাজার পার হতেই মেঘ কেটে গিয়ে চোখ ধাঁধানো রোদ উঠে গেলো। হাজাম নামক পেশাজীবীর রমরমা ব্যবসা এদিকে। এলাকার কোনো খাম্বা তাদের পোস্টারিং থেকে নিস্তার পায়নি। আজ হাঁটছি সরাসরি সূর্যের দিকে মুখ করে। চোখেমুখে রোদের ঝাপটা। শ্রীফলা বাজার পার হতেই গাছশূন্য রাস্তার পাশে আবির্ভাব হতে লাগলো দু'চারটা করে খেজুর গাছ। এদিকের চা দোকানিরা চিনি ছাড়া চা দিতে বললে সহজে বোঝে না। বলতে হয় চিনি বাদ। এই রাস্তাটা যথেষ্ট মসৃণ। জামালগঞ্জ বাজার পার হতে সেটা হয়ে গেলো মসৃণতর। মঙ্গলকোটের কাছে সাইকেলে চাপা এক চাচা ধীরগতিতে আমার পাশে সাইকেল চালাতে চালাতে এটা-সেটা প্রশ্ন করতে লাগলেন। আমার পেশাগত পরিচয় আমি চলতি পথে সহজে দেই না। পেশাগত পরিচয় জানলে লোকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে। এই চাচার ঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কি মনে করে ডাক্তার পরিচয় দিতেই ওনার সাম্প্রতিক রোগের উপসর্গ শুনতে হলো পরের মিনিট দশেক। সাধ্যানুযায়ী পরামর্শ দিয়ে পার পেতে যাবো এমন সময় চাচা জিজ্ঞেস করলেন ওনাকে একবার পরীক্ষা করা যায় কিনা। আমি যন্ত্রপাতি কিছু নেই বলতেই উনি ব্যাগের দিকে ইঙ্গিত করলেন। ব্যাগে আমার শুধুনিত্যব্যবহার্য জিনিস আছে শুনে বড় আশাহত হলেন ভদ্রলোক। চুকনগর থেকে প্রবেশ করলাম খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়। চুকনগর এসে আব্বাসের হোটেলের চুই ঝাল না খাওয়াটা পাপের পর্যায়ে পড়ে। ভরপেট চুই ঝাল দিয়ে খাসির মাংস খাওয়ার ফলশ্রুতিতে পানি পান করতে হলো দুই লিটার। এখান থেকে খুলনা শহর দুইভাবে যাওয়া যায়। মহাসড়ক হয়ে কিংবা শাহপুর হয়ে। অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি শাহপুরের রাস্তা বেছে নিলাম আমি। বাজার ছেড়ে সামনে এগিয়েই পেলাম আপার ভদ্রা নামক নদী। ড্রেজিং চলছে এই নদীর। শীর্ণকায় একটা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে নদীটি। এই সেতুর নাম সন্ন্যাসগাছা। খানিক সামনে গিয়েই গৌরীঘোনা বাজার৷ এখান থেকে আবার প্রবেশ করলাম যশোরের কেশবপুরে। ভরতভায়না বাজার থেকে হাতের ডানে মোড় নিয়ে গ্রামের ছোট রাস্তা। এখানে গ্রামের ইলেকট্রিক পোলগুলোতে সব ডুবুরির নম্বর দেওয়া। এই অঞ্চলে ডুবুরির কাজ কি সেটাই বোধগম্য হলো না৷ হাঁটতে হাঁটতেই বছর ষাটেকের এক বুড়ো এসে জিজ্ঞেস করলেন- 'হোয়াটস ইউর মাদারল্যান্ড?' আমি বাংলাদেশ জানাতেই ভদ্রলোক আগ্রহ হারালেন সম্ভবত। আর অল্প হেঁটে পৌঁছে গেলাম ভরতভায়না বৌদ্ধ মন্দিরে। একে স্থানীয়ভাবে ভরত রাজার দেউলও বলা হয়। দেখতে কুমিল্লার শালবন বিহারের মিনি ভার্সন।
মূল প্রাঙ্গণে ঢুকেই হাতের বামে বিশাল বট গাছ। এখান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর পরেই হরি নদী। তিতাস নদীর মতো এর দুপাশেও ইটভাটা। হরি নদীর ওপার থেকেই আবার প্রবেশ করলাম খুলনা জেলায়। আর কিছুক্ষণ এই রাস্তা ধরে হাঁটতেই রুদাঘরা ইউনিয়ন। বাংলাদেশের প্রথম সবুজ ইউনিয়ন দাবি করা ব্যানার শোভা পাচ্ছে পরিষদের গেটে। রাস্তা আরো বেশি ছায়া-সুনিবিড় হলো মিকশিমিল বাজারের পরে। এদিকে কড়ই গাছের আধিপত্য কমেছে। তার জায়গা নিয়েছে ছোট পাতার গাছ বাবলা।
মধুগ্রামে মাছের ঘেরে খাবার দেওয়ার দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। খাবারের লোভে একটা মাছ উঠে যাচ্ছে অন্য মাছের উপর। শত শত তেলাপিয়া মাছ এক পুকুরে। একটু বাদেই শাহপুর নামক বেশ বড়-সড় বাজার। ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির নির্মীয়মাণ ক্যাম্পাস এই বাজারেই। শ্বাসকষ্ট বা ঘন প্রস্রাবের চিকিৎসায় মাদুলি দেওয়া হয়- এমন সাইনবোর্ড পেলাম থুকড়া বাজারে। কিছুদূর এগিয়েই রামকৃষ্ণপুর। ফুটবল চলছে পাশের এক মাঠে। তা দেখতেই পাড়ার মেয়েরা রাস্তার ধারে পিঁড়ি নিয়ে বসে পড়েছে। ছেলেরা ভিড় করেছে মাঠ ঘিরে। শলুয়া বাজারে অপেক্ষা করছিল আবীর। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া আবীর এখান থেকেই হাঁটবে বাকি পথটা। আরো খানিক এগিয়ে পেয়ে গেলাম রাবাত ভাইকে। গল্পে গল্পে বাইপাস মোড় আসতেই রাবাত ভাই নিয়ে গেলেন আল-জামিল ফিশ কাবাবে। দারুণ একটা ফিস কাবাব খাওয়ার পরে দোকান মালিক মিজান ভাই নিজেই চায়ের ফাঁকে বেশ খানিকক্ষণ গল্প করলেন। সন্ধ্যার আঁধারে বাকি পথটুকু পা চালিয়ে মহসিন মোড় এসে আজকের মতো ইস্তফা। মহেন্দ্রতে চেপে নিউমার্কেট আসতেই পেয়ে গেলাম সৈকত আর প্রান্তকে। সৈকতের বাসাতেই উঠবো আজ। ও সদ্যই বুয়েট থেকে বেরিয়েছে পাস করে৷ খানিক বাদেই চলে এলো আমার মেডিক্যালের প্রিয় জুনিয়র পিয়াস। পিয়াস সেই আগের মতোই প্রাণোচ্ছ্বল আছে। ওকে বিদায় দিয়ে সৈকতের বাসার পথ ধরলাম। রাতে আন্টির বানানো এ অঞ্চলের স্পেশাল সেমাই পিঠা খাওয়া হলো পেটপুরে।
চলবে...
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২০
এএ