ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

জমে উঠছে কক্সবাজারের পর্যটন

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১
জমে উঠছে কক্সবাজারের পর্যটন

কক্সবাজার থেকে: করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন ‘লকডাউনের’ কবলে থাকার পর পর্যটকদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয়েছে কক্সবাজার। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও বাড়ছে।

আর এতে আবারও চাঙা হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন বাজার।

ট্যুরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় সিজন-অফসিজন মিলিয়ে দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০ লাখ পর্যটক আসেন কক্সবাজারে। টানা কয়েকদিনের ছুটিতে অথবা শীতের মৌসুমের সাপ্তাহিক দু’দিনের ছুটিতেই লক্ষাধিক পর্যটক আসেন কক্সবাজারে।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধু কক্সবাজারেই পর্যটন খাতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। আর ‘লকডাউনের’ মতো কারণে এক মাস বন্ধ থাকলে কক্সবাজারে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা ও উদ্যোগে শুধু ক্ষতিই হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের কয়েক দফা ‘লকডাউনে’ কক্সবাজারের পর্যটন খাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন বলে এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান।

তবে অচলাবস্থা কাটিয়ে আবারও চাঙা হচ্ছে এখানকার পর্যটন ব্যবসা। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির ও স্তরের পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। এছাড়া বিভিন্ন বিচ পয়েন্ট ছাড়াও প্রায় পুরো শহরজুড়েই পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যায়।

কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী বিচসহ আশপাশের সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এর পাশাপাশি কেনাকাটার জন্য ঝিনুক মার্কেটসহ বার্মিজ মার্কেট এবং বিচ সংলগ্ন মার্কেটগুলোতেও ক্রেতা সাধারনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। খাবারের হোটেল, রেস্তোরাঁ, সামুদ্রিক মাছ বিক্রির ভাসমান হোটেলগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল। সবমিলিয়ে নিজের চিরচেনা রূপে দেখা যায় কক্সবাজারকে।

ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারমুখী যাত্রীর ব্যাপক চাপও লক্ষ্য করা যায়। সেন্টমার্টিন পরিবহনের অ্যাডমিন ও আইটি কর্মকর্তা নুরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে আমাদের তিনটি গাড়ি ছেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে সেটা বেড়ে কখনও কখনও চার থেকে পাঁচটি হয়। তবে ২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারমুখী যাত্রীর এতবেশি চাপ ছিল যে, আমাদের সাতটি গাড়ি ছাড়তে হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণেরও বেশি।

শহরের বেশিরভাগ হোটেলেই বিশেষ করে তারকা হোটেলগুলো ইতোমধ্যে অতিথি দিয়ে পূর্ণ হয়ে আছে। ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টোয়াক) ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, তারকা হোটেলগুলোতে কোনো রুম খালি নেই। এরপর মাঝারি মানের যেগুলো আছে সেগুলো প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বুকড। ভেতরের দিকে কিছু হোটেলের রুম হয়তো খালি আছে। শহরে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, আবাসিক ফ্ল্যাট রয়েছে। অন্তত তিন লক্ষাধিক অতিথিদের জায়গা দিতে পারবে কক্সবাজার। এ শুক্রবার ও শনিবার মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক এসেছেন বলে আমাদের ধারণা। কোনো কোনো ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটকও আসেন। আমাদের অনুমান, দিন দিন পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।

পরিবহন, আবাসস্থল এবং খাবার ছাড়াও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সেবার ব্যবসাগুলোও অনেকদিন পর ভালো সময় পার করছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নিবন্ধিত ফটোগ্রাফার রহিম মোল্লা বলেন, এতদিন কেউ আসেনি, তাই আয়-রোজকার বন্ধ ছিল। খুলে দেওয়ার পর অল্প অল্প করে মানুষজন আসে। আজ শুক্রবার তাই অনেকে আসছে। আগের কিছুদিন এমন ছিল না।

কলাতলী মোড়ে সামুদ্রিক মাছ বিক্রির দোকানদার রাকিব উদ্দিন বলেন, আমরা তাজা মাছ বিক্রি করে রান্না করে পরিবেশন করি। আগের কিছুদিন গেস্ট আসবে মনে করে মাছ এনে বিক্রি করতে পারিনি। এখন আবার গেস্টরা আসছেন। এমন থাকলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

এদিকে পর্যটকদের বাড়তি চাপের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিজেদের প্রস্তুতি সাজিয়েছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটকরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারেন তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশেষ করে ভ্রমণের পাশাপাশি যেন স্বাস্থ্যবিধি বজায় থাকে এবং সবাই যেন সুস্থ থাকেন সে বিষয়েও বিশেষভাবে কাজ করা হচ্ছে। সবাইকে সবসময় মাস্ক পরার জন্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জাগায় জাগায় মাইকিং করা হচ্ছে। বিচে যাওয়ার সময় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পর্যটকদের সতর্ক ও সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো তাদের ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক অতিথিদের সেবা দিতে পারবেন। হোটেলে অতিথিদের ঢোকার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসব কাজের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি কাজ করছে। পুরো বিষয়টি তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। কোথাও ব্যত্যয় পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১
এসএইচএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।