দেশ-বিদেশের মুসুল্লিরা এখনও ইজতেমার ময়দানে আসছেন। আগামীকাল রোববার (২২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
ইজতেমার মাঠে মুসুল্লিরা বয়ান শোনার পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, তালিম, মশক ও নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
ইজতেমার ময়দানে মূল মঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় বয়ান দেওয়া হয়। বয়ান মাঠে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলায় তরজমার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায়ও অনুবাদ করে প্রচার করা হয়।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) জোহরের নামাজের পর ইজতেমার মাঠে আম বয়ান করেছেন, তাবলিগ জামাতের সাবেক আমির দিল্লি নিজামুদ্দিনের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়েরুল হাসান (রহ.)-এর ছেলে মাওলানা মুরসালিন।
বয়ানে মাওলানা মুরসালিন বলেন, আমরা যা করব, আল্লাহতায়ালাকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহতায়ালার হুকুমমতো আমরা যেন সারাজীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজের মানুষের মাঝে দ্বীন কায়েমের জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসূলরা (সা.) দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে পাঠিয়েছিলেন। নবী-রাসূলদের (সা.) আল্লাহ নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারী এখন তার উম্মতের ওপর। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে তাই আমাদের দাওয়াতের কাজে বেশি বেশি আত্মনিয়োগ করতে হবে। এ কাজ থেকে মুখ লুকিয়ে রাখার কোনো অবকাশ নেই। বর্তমান সময়ে মুসলমানদের মাঝে দাওয়াতের আমল কমে গেছে বলেই মুসলমানরা পদে পদে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে।
মাওলানা মুরসালিন তার বয়ানে উপস্থিত মুসুল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এটা আল্লাহর একক সিদ্ধান্ত। আর দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে। আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি হবেও না। কারণ তিনি কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন, পৃথিবীতে যতো কিছু আছে তা সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহতায়ালার স্বত্ত্বা চিরস্থায়ী; যার কোনো শুরু নেই আর শেষও নেই। আল্লাহপাক পূর্বে ছিলেন যার পূর্বে কোনো কিছু ছিল না এবং তিনি সবকিছুর পরে থেকে যাবেন যার পরে আর কিছুই থাকবে না। সৃষ্টিকূলের শুরু আছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কোনো শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখতে পান আর গোপনে যা কিছু হয় তাও তিনি দেখতে পান। আল্লাহতায়ালার দৃষ্টির বাইরে কিছু নেই, একটি অনুও নেই। সবকিছু তার দৃষ্টিসীমার মাঝে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা মহান শক্তিশালী। তিনি সব কিছু জানেন। তার জ্ঞানের বহির্ভূত কোনো জিনিস নেই। এমন এক সময় ছিলো- তখন পৃথিবীর কোনো বস্তু সম্বন্ধে আলোচনা ছিলো না কিন্তু তখনও আল্লাহতায়ালা ছিলেন। যখন মানুষ ছিলো না, মানুষ সম্পর্কে কোনো আলোচনা ছিলো না।
আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি খেজুর গাছ হতে খেজুর বের করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করতে পারেন। মানুষের জীবন দিতে পারেন।
মাওলানা মুরসালিন বয়ানের শেষে এসে বলেন, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার জীবন। মানুষকে এই ধোঁকার জীবন থেকে বেঁচে চলতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলছেন, তুমি এসব কিছু হতে ফিরে আমার দিকে আসো, আমাকে পেতে চেষ্টা করো, তুমি যদি আমাকে পেয়ে যাও তা হলে মনে করবে তুমি দুনিয়ার সব কিছু পেয়ে গেছো। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলো তাহলে মনে রাখবে তুমি পৃথিবীর সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো। তাই একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের মাকসাদ বানাতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। তোমরা কোথায় পলায়ন করছো? তোমরা কোথায় ব্যস্ত হচ্ছো? এসো, সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে এসো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
এমএইউ/