তবে তাদের এ আনন্দে এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৃষ্টি। আষাঢ় মাস শুরু হয়ে গেছে সোমবার (১৫ জুন) থেকেই।
বক্সিরহাটে নাবিলা জরি হাউসের মালিক মোহাম্মদ আবদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার এই সময়ে সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় বিয়ের সামগ্রী বিক্রি হয়নি। দোকান চালু রাখতে ঘুড়ি বিক্রি করেছি গত দুই মাস ধরে। প্রতিদিন শ’খানেক ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে। এখন বৃষ্টির জন্য সেটাও বন্ধ হওয়ার অবস্থা।
স্থানীয় দোকানগুলোতে ঢাকাইয়া ঘুড়ি প্রতি পিস ১০টাকা, দুই পঙ্খী ঘুড়ি প্রতিটি ৭ টাকা, রকেট ঘুড়ি ১০ টাকা, চার পঙ্খী ঘুড়ি ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাঁশ ও কাঠের তৈরি নাটাই প্রতি পিস ৬০-৭০ টাকা এবং মানভেদে কোনটি ১৫০ টাকাও বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি রাজকীয় নাটাই (কারুকাজ সম্বলিত) প্রতিটি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে বলে জানালেন দোকানীরা।
গত একমাস ধরে মেঘযুক্ত নীলাকাশে তাকালেই দেখা মিলেছে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ভোকাট্টা, ময়ূরপঙ্খী, ডুগডুগি, শতরঞ্চ নামের ঘুড়ির ঝাঁক। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ছিল শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড়। অলস সময়ে আকাশজুড়ে ঘুড়ির ওড়াউড়ি আর কাটাকাটির লড়াই দেখতে ঘরের জানালায় কিংবা বারান্দায় উঁকি দিয়েছেন সব বয়সীরাই। দীর্ঘ ছুটির মন খারাপের এ সময়ে আকাশে ঘুড়ি উড়িয়েই যেন মুক্তির খোঁজ করেছেন সবাই।
সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র নাফিস বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল বন্ধ অনেকদিন। করোনার ভয়ে ঘর থেকে বের হই না। বিকেলে ছাদে উঠে ঘুড়ি উড়াতাম। এখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, তাই ঘুড়ি উড়ানো যাবে না। সারাদিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে পড়ালেখা, টিভি দেখা, মোবাইলে গেমস্ খেলে সময় কাটতে চায় না।
জানা গেছে, পাতলা রঙিন কাগজের সঙ্গে বাঁশ থেকে বানানো চিকন কঞ্চি লাগিয়ে ঘুড়ি তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নকশার ঘুড়িও বানানো যায়। ঘুড়ির কাটাকাটির খেলায় প্রয়োজন হয় ধারালো সুতোর। এই সুতো তৈরির জন্য আগে থেকেই মাঞ্জা দেওয়া হয়। মাঞ্জা বলতে সুতোর বিশেষ প্রস্তুত প্রক্রিয়াকেই বুঝানো হয়। সুতায় মাঞ্জা দিতে প্রয়োজন হয় ভাতের ফেন, সাগুর দানা, কাঁচের গুড়োর মিশ্রণ, রঙ ও শিরিষের আঠা কিংবা জবা ফুলের পাতা। বর্তমানে সুতার মধ্যে- বর্ধমান ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লালগুন, কালাগুন, কৃষ্ণা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রঙের মূল্য নির্ভর করে সুতার রিলের ওপর।
এদিকে সাধারণ ছুটিতে অনেক ফার্নিচার মিস্ত্রিও পড়েছেন কাজের সংকটে। কারখানায় ফার্নিচার তৈরির কাজ পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় অনেকে নাটাই তৈরি করে সরবরাহ করেছেন বিভিন্ন দোকানে।
পাঁচলাইশের বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন কাদের বাংলানিউজকে বলেন, শৈশবে আমরাও উড়িয়েছি কত ঘুড়ি। করোনাকালে আকাশে ঘুড়ির ওড়াউড়ি দেখে জাগে সেসব স্মৃতি। এখন শেষ বয়সে এসে মনে হয়-এতদিনের বাঁধন যেন পাষাণ ঘুড়ি কেটে নিচ্ছে সাধের নাটাই থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
এসএস/এসি/টিসি