শিক্ষকদের বিরুদ্ধে করা সেই শোকজ প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস চত্বর প্রদক্ষিণ করে স্বাধীনতা চত্বরে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিস প্রত্যাহার, ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক নিরাপত্তা দুর্বল হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ভিসি স্যারের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান ও ফাঁসকৃত অডিও তদন্ত করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (ফেসবুক) ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপ না করা।
শোকজ করা শিক্ষকেরা হলেন- অর্থিনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াহিয়া ব্যাপারী, ব্যবসায়ী প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভিসির কাছে চাকরিপ্রার্থী যুবকের ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার একটি অডিও ফাঁস হয়। সে ঘটনায় তিনজন শিক্ষক ফেসবুকে মন্তব্য করলে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই শোকজ নোটিস প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ক্যাম্পাসে ভিসিকে সার্বক্ষণিক অবস্থান ও ফাঁসকৃত অডিও তদন্তের দাবি জানান তারা। এসব দাবি মানা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবি মানা না হলে ক্যাম্পাসে সব বিভাগের পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে কথা হলে পাবিপ্রবির ছাত্রলীগের সভাপতি মাহামুদ চৌধুরী আসিফ বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। ভিসি স্যার এবং চাকরিপ্রার্থীর মোবাইল ফোনের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করে এর সঠিক সমাধান না করে উল্টা তিন শিক্ষককে ফেসবুকে লেখার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে।
দায়িত্বরত প্রশানিক কর্মকর্তারা সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। তবে কারো মত প্রকাশে বাধা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একত্মতা প্রকাশ করেছি। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যদি কোনো ধরনের বাণিজ্য হয়ে থাকে তবে এর সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচার করতে হবে।
আন্দোলনের বিষয় নিয়ে কথা হয় ছাত্র উপদেষ্টা মো. মাহামুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি তারা কি কারণে আন্দোলন করছে সেটি তারা নিজেরাই ভালোভাবে জানে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের কাছে কোনো ধরনের দাবি না এনে তারা প্রশানিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছে।
এ ব্যাপারে পাবিপ্রবির প্রক্টর ড. প্রীতম কুমার দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অডিও ভাইরাল হয়েছে সেটি ষড়যন্ত্রভাবে করা হয়েছে। আর একজন উপচার্যের বিরুদ্ধে অশোভনীয় মন্তব্য করায় ওই তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে প্রশাসন। আর এই মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক অডিও ফেসবুকে ভাইরাল করার জন্য আমরা পাবনা সদর থানাতে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে। চার দফা নিয়ে এখনো শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে কিছু লিখিত দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
আরএ