রাজধানীর গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের উল্টো দিকে থাকা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এ দুর্দশা বই পড়ার কক্ষেও। সেখানেও চেয়ার-টেবিল, বই সবই আছে, শুধু পাঠকরাই আসেন না।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খবরের কাগজ পড়ার কক্ষে টেবিলে প্রথম সারির ১৫টি জাতীয় দৈনিকের পাতা পাখার বাতাসে উড়ছে। দু’জন সেসব দেখছেন আর এক যুবক টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
গোল হয়ে খোশ গল্পে মেতে আছেন কেয়ারটেকাররাও।
অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি গত ২০ বছর ধরে পড়তে আসি। ৩-৪ বছর আগেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসতেন। তখন অনেক জমজমাট ছিলো। এখন আর আসেন না তারা। বেশি আসেন মধ্যবয়স্করা, যাদের বেশিরভাগই অবসর সময় কাটান এখানে। আর কেউ কেউ আশেপাশে ঘুরতে এসে একটু বসে থেকে যান’।
তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সাংবাদিকও আসতেন। বিভিন্ন বই-পেপার পড়ে নোট নিতেন, অনেকে আসতেন গবেষণা করতে। এখন আর সেসব চোখে পড়ে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই এ গ্রন্থাগারে আসা-যাওয়া স্বপন কুমার বিশ্বাসের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে তো এখানে ভিড়ের কারণে পত্রিকা ধরতেই পারতাম না। এখন পড়ে থাকে, কেউ ধরতে চান না। দুইটার পর তো লোকই থাকেন না’।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে পুরনো বইয়ের সংকট দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি মোঘল আমলের ইসলামের ইতিহাসের একটি বই খুঁজছিলাম, পাইনি’।
ধীরে ধীরে পাঠক হারাচ্ছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গ্রন্থাগারটি। গত ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চার কর্মদিবসের নিবন্ধন খাতার হিসাব অনুসারে, ওই চারদিনে মাত্র ১০০ জন পাঠক এসেছেন। তাদের মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার কথা লিখেছেন মাত্র ২২ জন বা ২২ শতাংশ।
বই পড়ার ক্ষেত্রে আরও করুণদশা। ২৪ এপ্রিল ৫ জন, ২৫ এপ্রিল ৬ জন ও ২৬ এপ্রিল ৯ জন বই পড়তে এসেছিলেন বলে নিবন্ধন খাতায় জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিয়মিতই আসেন। অর্থাৎ বাড়ছে না নতুন পাঠকও।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাঠক কমেছে বলে আমার মনে হয় না। তবে অবস্থানের কারণে আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এজন্য হয়তো কিছুটা কম’।
জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে ১৮ হাজারের বেশি বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে বলে জানান সহকারী লাইব্রেরিয়ান জান্নাতুল ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সায়েন্স ফিকশনের বইই রয়েছে হাজারের বেশি। রেফারেন্স সেকশনে অনেক পুরনো ইতিহাসের বই আছে’।
‘আমাদের এই গ্রন্থকেন্দ্রকে ডিজিটাল করা গেলে পাঠক বাড়বে। পুরো ভবনে ওয়াইফাই জোন করা যায়। এখানে কিছু কম্পিউটার ও সার্ভার প্যানেল এবং কোথায় কোন সেলফে কোন বই আছে- এসব তথ্য থাকলে পাঠকরা আসবেন বলে মনে করি’।
জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে সারা দেশে ১ হাজার ৬৫টি বেসরকারি গ্রন্থ কেন্দ্র রয়েছে। গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের উল্টো পাশের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ৫ম তলায় রয়েছে বই পড়া ও খবরের কাগজ পড়ার আলাদা কক্ষ। রয়েছে ৩টি বই কক্ষ ও একটি রেফারেন্স শাখাও।
আরও খবর...
** ‘জনবল ও অর্থ সংকটে’ বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার
** খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের দুর্দশা চরমে
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** গরুর অভ্যর্থনা মৌলভীবাজার গণগ্রন্থাগারে!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
এসএম/এএসআর