ঢাকা সিটি কলেজে এইচএসসি পড়ুয়া আতিক শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলছিলেন, বাস থেকে কেন ভালো ট্রেন। তার যুক্তির সঙ্গে ট্রেনের একতা এক্সপ্রেসের কার্যক্রম হুবহু মিলেও যাচ্ছিল।
কিশোর বয়সেই তার ট্রেনে যাতায়াতের ভালোই অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে বোঝা গেলো। জানালেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের দিন অনেক আগেই শেষ। এখন ধীরে ধীরে সময় মেনে চলতে শিখেছে বাংলাদেশ রেল। বিশেষ করে মহাসড়কে যখন দীর্ঘ গাড়ির জটলা তখন ট্রেনে গেলে নিশ্চিন্ত যাত্রা নিশ্চিত।
দিনাজপুর থেকে ছাড়া ট্রেন একতা এক্সপ্রেস পার্বতীপুর চলে আসে রাত পৌনে ১২টার দিকে। হচ্ছিল বৃষ্টি। ১২টায় পার্বতীপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা এবং ঠিক তাই-ই হলো। বৃষ্টির মধ্যেও যথা সময় মেনে চলা। এরপর ফুলবাড়ী, বিরামপুর, জয়পুরহাট, শান্তাহার (বগুড়া), নাটোর হয়ে সোজা ঢাকায় আসতে সময় লাগলো মাত্র আট ঘণ্টা।
পাশে বসা এক যাত্রীর ফোনালাপ শুনে স্পষ্ট হচ্ছিল কত দ্রুত এগোচ্ছে এই যান! তার এক সহকর্মী দিনাজপুর থেকে রোববার (১৮ জুন) বিকেল ৫টায় রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় ফেরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে। সময় তো লাগলোই তার ওপর আবার ধুলাবালু, ভাঙা রাস্তা এবং বৃষ্টিতে দুর্ভোগ।
সড়ক পথে খানাখন্দ, সংস্কার কাজের খড়গ, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ছাড়াও দীর্ঘ গাড়ির সারি এক হয়ে ঈদের আগেই জানযট রূপ নিয়েছে এক বিভীষিকায়। যাত্রীদের মাঝে তাই দুশ্চিন্তা ঈদের দিন ঘনিয়ে এলে আরও কী না কী হয়! হয়ত কারো কারো ঈদ সারতে হতে পারে সড়কেই!
ঈদ উদযাপনে দিনাজপুরে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন ইয়াসমীন আক্তার। সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়ে টিকেছে রাজউক উত্তরা কলেজে, ভর্তি হতে হবে দ্রুতই। তাই ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে। সোমবারই (১৯ জুন) ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার তাড়া থেকে তার ভরসা ট্রেনেই। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাসে গেলে তো কী যে কষ্ট, দুর্ভোগ! এরচেয়ে ট্রেন কত ভালো। এসি বাসে অন্তত ১২শ’ টাকা টিকিট, আর একই রকম সুবিধা ট্রেনে মাত্র সাড়ে ৯শ’র মধ্যে। সঙ্গে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার কোনো টেনশন নেই, মুখ হাত ধোয়াসহ টয়লেটের সুব্যবস্থা তো রয়েছেই। আবার ফিরবেন কিসে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেনের টিকিট অনলাইনে ম্যানেজ করেছি।
একতা এক্সপ্রেসের ট্রেন টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক রুটেই আমরা মানুষকে এখন প্রকৃত সেবা দেই। আগের থেকে সার্বিক সেবার মান অনেক বেড়েছে। সেইসঙ্গে মানুষও এখন নির্ভর করে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওপর।
ভোর হতে থাকে। নতুন দিনের ভোর। স্থান যমুনা সেতু। সেতুতে ট্রেনের গতি একটু কমে আসে। মেঘলা আকাশ সেসময় ভর করে প্রকৃতিতে। ঘোলা রঙা যমুনার জল আর ঘোলা-অপরিষ্কার আকাশ যেন একে অন্যের প্রতিচ্ছবির মতোই সুন্দর দেখাচ্ছিল। যমুনা পার করতেই ট্রেনের গতি ফের গেলো বেড়ে। সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শুরু। এরই মধ্যে একতা স্বাচ্ছন্দ্যে পৌঁছে দিলো ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে সকাল সাড়ে ৮টায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
আইএ/জেডএম