বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মেরিনা চা বাগান এলাকায় গিয়ে শ্রমিক ও এলাকাবাসীর অসন্তোষ ও আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। বনবিভাগ হাতিটিকে জীবিত বসে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যার দিকে হাতিটি বাগানের ভেতরের বনের দিকে চলে গেলে আজকের জন্য অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও হাতিটিকে বশে আনার চেষ্টা করা হবে।
হাতিটিকে অচেতন করার দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক থেকে আসা ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান (যিনি বঙ্গ বাহাদুরকে অচেতন করেছিলেন) দু’বারের চেষ্টায় দু’টি ইনজেক্শন হাতিটির গায়ে পুশ করলেও একটির সামান্য গিয়ে পড়ে যায় এবং অন্যটি পুরোপুরি হাতিটির শরীরে ডুকেছে বলে তিনি বাংলানিউজকে জানান।
তিনি আরও বলেন, একটি হাতিকে অচেতন করতে ৪ মিলি জাইলাজিন ইনজেকশন পুশ করলেই আয়ত্বে আসার কথা। অথচ এ পর্যন্ত ৭ মিলি জাইলাজিন ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে তবুও হাতিটি অচেতন হয়নি। তিনি বলেন অতিরিক্ত ইনজেকশন দিলে হাতিটি মরেও যেতে পারে। অচেতনের দুই ঘণ্টার মধ্যে হাতিটির জ্ঞান ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও জানান তিনি।
ইনজেকশন পুশ করার পরে হাতিটি দৌড়ে টিলার উপরে উঠে একটি জায়গায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবারও হাঁটতে শুরু করে। হাতিটি ইতোমধ্যে বাগানের ২,৪,৫,৬,৭ এবং ৮ নং সেক্শনের অনেক চা গাছ ও বিশাল আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে ফেলেছে। সর্বশেষ হাতিটি উঁচু টিলা থেকে সমতলে নেমে আসার সময় একটি বিশাল করই গাছ উপড়ে ফেলে।
বুধবার সকালে চা বাগানের শ্রমিকরা চা ফ্যাক্টরির সামনে জড়ো হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। একপর্যায়ে হাতিটি বাগান থেকে না সরানোয় বাগানের হেড টিলা ক্লার্ক মো. ওয়ালি উল্লাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিতও করে এবং তারা কাজে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। পরে পুলিশ ও বাগান পঞ্চায়েত মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বনবিভাগের লোকদের বাগানে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। আজ অনেকটা চুপিসারে অন্যপথ দিয়ে বনবিভাগের লোকেরা বাগানে প্রবেশ করে।
বাগান শ্রমিক খোকা নায়েক, সুশিল বাগতি ও এলাকাবাসী হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাতির ভয়ে তারা বাগানের কাজে যেতে পারছেন না। কাজে না গেলে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা দেবে না।
ইউপি সদস্য মনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন ২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) থেকে অদ্যাবদী তিনি বাগানে হাতির স্পট থেকে বন বিভাগকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। হাতিটির জন্য তার এলাকার লোকজন আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলেও জানান তিনি।
কুলাউড়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন জনগণ ও বনবিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা দিতে তারা এসেছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এখানে অবস্থান করছেন সিলেট বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএস মনিরুল ইসলাম, ঢাকা চিড়িয়ানা খানার ডেপুটি কিউরেটর নুরুল ইসলাম, সহকারী বন সংরক্ষক রাজেশ চাকমা, সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান (ওয়াইল্ড লাইফ), ডা. নাজমুল হুদা, ডা. জাকিরুল ফরিদ ঢাকা চিড়িয়াখানা, কুলাউড়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফ উদ্দিন আহমেদ, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহ্ সাদিক ও রাজু আহমেদসহ বন বিভাগের ২০ জন লোক কাজ করছেন।
সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ ওয়াল্ড লাইফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি মনে করেন হাতিটিকে জীবিত বশে আনা সম্ভব। জীবিত বশে আনার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আর এস মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন হাতিটিকে জীবিত ধরার জন্য। তিনি আরও বলেন দু’টি ইনজেক্শন পুশ করা হয়েছে এর মধ্যে একটির গায়ে রক্তের ছাপ দেখিয়ে বলেন একটি সম্পূর্ণ হাতিটির গায়ে পুশ হয়েছে,অন্যটির সামান্য। তিনি এও বলেন ঢাকা থেকে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে ইনজেকনগুলো আনা হয়েছে।
হাতিটির মালিক মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলকাড়িয়া নামে একজন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর গনু মিয়া নামে একজন মাহুতকে পিস্ট করে মেরে ফেলেছে হাতিটি। হাতিটি অনেক বড় হওয়ায় এমন হয়েছে। আর কোনো প্রাণহানি যাতে না হয় সেজন্য জীবিত উদ্ধার করতে না পারলে মেরে ফেললেও তার আপত্তি নেই।
মেরিনা বাগানের ম্যানেজার মো. জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ভয়ে কোনো শ্রমিক বাগানের কাজে যায়নি। এতে তাদের প্রতিদিন ৮০-৯০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন যত শিগগির সম্ভব বাগান থেকে হাতিটিকে সরিয়ে নেয়া হোক। তিনি হাতি মালিকের গাফিলতির জন্য এমন হচ্ছে বলেও জানান।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরএ