ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিরুপায় বিড়ি শ্রমিকরা তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
নিরুপায় বিড়ি শ্রমিকরা তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে একটি বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত একদল শ্রমিক। ছবি: বাংলানিউজ

ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া থেকে: কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ফিলিপনগরে বাস করেন আমিরুল ইসলাম। দেশভাগের দুই বছর আগে তার জন্ম। বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী এই প্রবীণের সংসারে তিনজন সদস্য।

দুই ছেলে আর এক মেয়ে তার। ছেলেরা যে যার মতো থাকেন।

আর মেয়ে সালমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন ভালো ঘর দেখে। কিন্তু কপালে তার সুখ সইলো না। বিয়ের দুই বছর পর সালমার একটা মেয়ে হয়, তার আরও দুই বছর পর একটা ছেলে। ছেলেটার জন্মের অল্পদিনের মধ্যে কী এক অজানা রোগে সালমা বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। এরপর থেকে আমিরুল ও তার পত্নীর দু’জনের সংসারে নতুন সদস্য হয় নাতি-নাতনি।
 
এই প্রবীণ আমিরুলের আয়ের উৎস বিড়ি বানানো। গত ৩৫ বছর ধরে এই কাজ করে দিনে ২৫০ টাকা আয় করেন তিনি। এই আয়ে নাতনিটাকে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাশ করিয়ে গত ঈদের আগে বিয়ে দিয়েছেন। আর নাতিটা পড়ছে অষ্টম শ্রেণিতে।
 
সংগ্রামের মধ্যেও এভাবে চলে যাচ্ছিল আমিরুলের সংসার। কিন্তু শঙ্কা এখন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বিড়ি ফ্যাক্টরি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ বয়সে আমিরুল কী কাজ করবেন, কোথায় কাজ করবেন, আর তাদের তিনজনের সংসারইবা চলবে কিভাবে? এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খায় তার মাথায়।
 
বিড়ি শ্রমিক আমিরুল অর্থমন্ত্রী কে সেটা না জানলেও জানেন প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেখ মুজিব দেশ স্বাধীন করিছেন। আমাগেরে মুক্তি দিছেন, বাংলায় কথা বলতি দিছেন। তার মিইয়া (মেয়ে) এখন দেশ চালান। তালি আমাগেরে মারবি ক্যান? আমি খালি তা-ই চিন্তা করি। ’
 
একটি বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত একদল শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজ
আমিরুলের মতো লাখো বিড়ি শ্রমিকের ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তাদের বিশ্বাস, শ্রমিকদের জন্য কিছু একটা উপায় বের না করে প্রধানমন্ত্রী এই শিল্প বন্ধ করবেন না।
 
বিড়ি শ্রমিক শারীরিক প্রতিবন্ধী লালচান বলেন, ‘আমাদের পাশের ফিলিপনগরের অধিকাংশ মানুষের জমি পদ্মার ভাঙনে গেছে। এখন তারা দিশেহারা। এই বিড়ি ফ্যাক্টরিতেই তাদের জীবিকা। ফ্যাক্টরি চললে দোকান, বাজার, অন্য ব্যবসা সব চলে। ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে সব বন্ধ থাকে। আমরা তো এদেশের নাগরিক। তাহলে প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়ে কি একটুও ভাববেন না?’
 
দৌলতপুর বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাস্তায় ঠেলে দেবেন না। কারণ তিনি নিজেই সংসদে বলেছেন যে, বিড়িশিল্প সাধারণ মানুষের শিল্প। ’
 
বিল্লাল বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আর আমলারা মিলে বিদেশি সিগারেট কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যদি এই শিল্প বন্ধ করার পাঁয়তারা করেন, তাহলে আমরাও বসে থাকবো না। আগে যেভাবে আন্দোলন করেছি, আবারো সেভাবে রাজপথে নেমে যাবো সারাদেশের ২৫ লাখ শ্রমিক। আর সেই আন্দোলন কেমন হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
এসআইজে/জেএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।