ঢাকা, বুধবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এখনও পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করে সেই ভাষণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৮
এখনও পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করে সেই ভাষণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা: বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন ৭ মার্চ। এই দিনই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। তার এই ভাষণের মধ্যেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। 

বুধবার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। তবে এবার ৭ মার্চের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর শিহরণ জাগানো ভাষণটি ইউনেস্কোর তরফ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায়।

এই স্বীকৃতি সেই ঐতিহাসিক দিনটি উদযাপনে যোগ করছে নতুন মাত্রা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন। স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি তার বজ্রধ্বনি সেদিন প্রকম্পিত করেছিল বাংলার আকাশ, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, - প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। ... রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। ’

তার সে ভাষণে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতার লড়াইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। বলা হয় ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে। যার যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে শাসিয়ে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের উচ্চারণে স্বাধীনতার লড়াইয়ের চেতনা জাগে সর্বস্তরের মানুষের মনন-মস্তিষ্কে। ছাত্র, যুবসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

সেই ভাষণে যখন বাঙালি তুমুল উদ্দীপ্ত-উজ্জীবিত, তখন এই জাতিকে দমিয়ে দিতে ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদাররা পৈশাচিক তাণ্ডবলীলায় মেতে ওঠে। গ্রেফতার করে নিয়ে যায় জাতির দিকনির্দেশক বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু গ্রেফতারের আগেই বঙ্গবন্ধু দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা।  

৭ মার্চের সেই ভাষণ এবং পরে স্বাধীনতার ঘোষণায় সর্বস্তরের জনতার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় করণীয়। বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার প্রতিরোধে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ত্রিশ লাখ প্রাণ আর লাখ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে বাঙালি ১৬ ডিসেম্বর লাভ করে তার শত শত বছরের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
 
এই বিজয়ের যাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে বিশ্ব দরবারে। বঙ্গবন্ধুর সেই অনন্য সাধারণ ভাষণটি জাতিকে উদ্বুদ্ধ-উজ্জীবিত করে আজো।

বরাবরের মতো এবারও ৭ মার্চ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে আওয়ামী লীগের জনসভা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেস্কোর তরফ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবারই প্রথম ৭ মার্চ উদযাপন করতে যাচ্ছে বাঙালি জাতি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ উপলক্ষে পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৮
এসকে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।