শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নে সরেজমিন পরিদর্শনে মেঘনা গ্রুপের এমন জমি গ্রাসের দৃশ্য দেখা যায়। চর রমজান সোনাউল্ল্যাহ, ছয় হিস্যা, জৈনপুরসহ বিভিন্ন মৌজার স্থানীয়দের শত শত বিঘা জমির দখলে এখন মেঘনা গ্রুপ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমি দখলে নিতে প্রথমে ভুয়া ও বেনামে দলিল করে নেয় মেঘনা গ্রুপ এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো। একজনের জমি আরেকজনের কাছ থেকে কিনে অথবা মূল জমি মালিকের অজ্ঞাতেই হাত করে নেওয়া হয় সেসব। এরপর বানানো হয় ভুয়া দলিল। জমি মালিকদের বাগে রাখতে ভোগানো হচ্ছে ভুয়া মামলা দিয়েও। সেই সঙ্গে আছে জীবননাশের হুমকি।
ইউনিয়নের ছয়হিস্যা গ্রামের আহসান উল্লাহ মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, মেঘনা গ্রুপ ভূয়া দলিলের মাধ্যমে আমার ১৬ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। প্রায় দেড় বছর আদালতে মামলা লড়ার মধ্যে দিয়ে আমি এখন দখলে। কিন্তু তাদের কাছেও ভুয়া দলিল আছে। আমি যার কাছ থেকে জমি কিনেছিলাম সেই মালিকের কাছ থেকে তারা জমি কিনেছে বলে দাবি করছে। এটা হতে পারে না। এলাকায় তাদের দালাল আছে। দালালদের হুমকি এবং মামলার ভয়ে আমরা কিছু বলতেও পারছি না।
উপজেলার শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা আবু সাইদের মা সালেহা বেগমের দুই শতাংশ জমি ২০১৬ সালে তার অনুপস্থিতিতেই দলিল করে নেয় মেঘনা গ্রুপ। আবু সাইদ বলেন, তাদের কাছে একটা দলিল আছে যে, আমার মায়ের কাছ থেকে নাকি তারা জমি কিনেছে। কিন্তু সেখানে আমার মা এর টিপসই, ছবি, এনআইডি কিছুই নেই। তাহলে কীভাবে কিনলো তারা? এই উপজেলার এমন শত শত মানুষের জমি এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপের যার জমি দরকার হবে, তাকে তাদের নির্ধারিত দামেই জমি দিতে হবে। নইলে জবর দখল, বেনামে দলিল, মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবে। তাদের অত্যাচারে আমরা অসহায় ও নিরুপায়।
প্রভাবশালী এবং বৃহৎ আকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের হাত থেকে নিস্তার পায়নি প্রভিটা গ্রুপের মতো স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের মতো ব্যক্তিমালিকানার জমিও। ঝাউচর এলাকায় সোনারগাঁও উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বেপারীর প্রায় ৫০ বিঘা জমি দখলে নেয় মেঘনা গ্রুপ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও অবস্থানগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভিটা গ্রুপের প্রায় ৪০ বিঘা জায়গার ওপরও কুনজর পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। জমিটির দুই দিকে প্রাকৃতিক নদী হওয়ায় অপর দুই দিকে নিজেদের স্থাপনা বানিয়ে ঘেরাও দিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। এর একদিকে টিনের শেড বানিয়ে কর্মীদের রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। আরেকদিকে নিজেদের স্থাপনা গড়ে তুলে পেপার মিলস দিয়েছে গ্রুপটি। সব আইন ও নিয়ম উপেক্ষা করে জমিটির সঙ্গে বাইরের সড়ক যোগাযোগ পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ছয় হিস্যা এলাকায় তারা (মেঘনা গ্রুপ) একেক দাগে একেক জনের জমি কিনেছে। কিন্তু পরে আশেপাশের অন্য মানুষদের জমিও তারা দখল করে নিয়েছে। প্রায় ৭০ বিঘা জায়গার ওপর তারা বালু ভরাট করেছে। এরমধ্যে আমারও দেড় বিঘা জমি আছে। আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি এগুলো। মেঘনা গ্রুপের ভয়ে আমরা কেউ কিছু করতে পারছি না। কিছু বলতে গেলেই মামলা দিয়ে দেয়। আমাদের জমি দখল করে আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়। এভাবে অসংখ্য গ্রামবাসীকে অত্যাচার করছে তারা।
উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বেপারী বলেন, ঝাউচরে আমার নিজের ৫০ বিঘা জমি ছিল। সেগুলো দখল করে তারা সেখানে পেপার মিলস, সুগার মিল এসব বানিয়েছে। আমার নামেই অন্তত ১০-২০টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে তারা। তাহলে একদমই সাধারণ মানুষের কী অবস্থা বুঝে নেন!
এ ব্যাপারে আলাপ করলে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, কর্মস্থলে আমি নতুন যোগদান করেছি। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/