ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘শিশু নির্যাতনকারীদের কঠোর সাজা পেতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
‘শিশু নির্যাতনকারীদের কঠোর সাজা পেতে হবে’

ঢাকা: শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেছেন, আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের প্রতি কোনো অন্যায়-অবিচার বরদাশত করা হবে না।

যারা শিশু নির্যাতন করবে তাদের অবশ্যই সাজা পেতে হবে। কঠোর সাজা পেতে হবে।  

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।  

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

সম্প্রতি দেশব্যাপী শিশু নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শিশুদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে। বাবা হয়ে সন্তানকে হত্যা করছে অন্যকে ফাঁসানোর জন্য। কী এক মানসিকতা! এই ধরনের হীন মানসিকতা সমাজে বেড়ে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা।  ছবি: পিআইডিশিশুদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের পাশে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী শিশু দেখলে তাদের অবহেলা করো না। কারণ তারাও তো তোমাদের মতোই মানুষ। এতে তাদের তো কোনো দোষ নেই। এটা অমানকিতা ও নিষ্ঠুরতা।  

সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিশুরা যাতে আধুনিক মনস্ক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রত্যেকটি শিশুর জীবন যেন অর্থবহ হয়, আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি।  

‘শিশুদের যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে না হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঝরে পড়া কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্যও নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। ’

ছোটভাই শেখ রাসেলের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, রাসেল- আমাদের পরিবারের সদস্যদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। বাবা তখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচনের প্রচারণার কাজে চট্টগ্রামে। আমরা চার ভাই-বোন বসেছিলাম, ওই ছোট্ট শিশুটির জন্মক্ষণের জন্য। তাকে কোলে নেওয়ার জন্য। তাকে আদর করবার জন্য। ১৯৬৪ সালে রাসেলের জন্ম। কিন্তু ১৯৬৬ সালে তাকে গ্রেফতার করা হলো।  

বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডি‘আমরা কারাগারে যেতাম আব্বার সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে রাসেলও থাকতো। কিন্তু আব্বাকে রেখে আসতে চাইতো না। আব্বা বললেন, এটা আমার বাড়ি, আমি এখানে থাকবো। তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে- তোমার বাড়িতে যাও। ’ 

জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার স্মৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন জেলখানায় যেতাম আগের দিন থেকেই  সে (রাসেল) খুবই অস্থির থাকতো। আমাদের ভাই-বোনদের কাছে ছুটে আসতো। কি যেন বলতে চাইতো। কিন্তু তার ব্যথাটা কিছুই বলতে পারতো না। মা বলতেন, আমিই তোমার আব্বা। ’ 

‘ছোট্ট শিশু রাসেল পিতার স্নেহ বঞ্চিত ছিল। আমরা তো ছিলাম-ই। বাসায় নেতাকর্মীরা আসতেন-তখনও সে আব্বার কাছে ছুটে যেতো। না জানি আবার আব্বাকে ছাড়া থাকতে হয় তার। ’ 

সত্তরের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হলো কিন্তু শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা দিলো না। আব্বা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলেন, তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। আবার রাসেল বাবার স্নেহ বঞ্চিত। আমাদের রাখা হলো ১৮ নম্বরের একটি ছোট বাড়িতে।  

‘জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) খুবই আদর করতো রাসেল। তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। রাসেল তার কাছে তুলা রাখতো, যখনই গুলির শব্দ হতো রাসেল সেই তুলা জয়ের কানে দিতো। যাতে জয় ভয় না পায়। ’

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আব্বা যেখানেই যেতেন, রাসেল সঙ্গে থাকতো। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ওই বাড়িতে একটি প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারেনি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি আর রেহানা। ভেবেছিলাম- হয়তো রাসেল বেঁচে রয়েছে। ’ 

ছোটভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে বড়বোন শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটা শিশুরই একটা ইচ্ছা থাকে, বড় হয়ে কী হবে! রাসেলেরও শখ ছিল, বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে।  

‘এ নিয়ে তার অনেক আগ্রহ দেখেছি। যখন গ্রামে যেত, সেখানে গিয়ে শিশুদের নিয়ে খেলতো। তার ভিতরে একটা দরদি মন ছিলো। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, বেঁচে থাকলে ৫৪ বছর বয়সে রাসেল কেমন হতো দেখতে! কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট কাউকে বাঁচতে দেয়নি।

দেশে ফেরার দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৫ আগস্টের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না বলেও আইন করা হয়। তারা শুধু একটা দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেনি। নারী-শিশুও হত্যা করেছে।  

‘কিন্তু তাদের রক্ষা করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ’৮১ সালে (১৯৮১) দেশে ফিরে এলাম, তখন মামলা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। আমি আমার বাবা-মা, ভাই হত্যার বিচার পাবো না। আমাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯/আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা 
এমইউএম/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।