ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শখ করে নয়, পেটের টানে কাজে আসছি 

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২০
শখ করে নয়, পেটের টানে কাজে আসছি 

বাগেরহাট: ৭-৮ দিন কাজে আসিনি। বাড়ির পাশের দোকান থেকে বাকিতে সদাই নিয়ে খেয়েছি। দোকানদার এখন আর বাকি দিচ্ছেন না। বরং আগের পাওনা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। চাল ফুরিয়ে গেছে দুইদিন আগে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীরাও ধার দেননা। গত দু’দিনে ঠিকমত খাবার খেতে পারিনি বউ-বাচ্চা নিয়ে। তাই শখ করে নয়, পেটের টানে কাজে আসছি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বাগেরহাট শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন শরীফ ট্রান্সপোর্টের গোলায় (ইটবালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীর নির্ধারিত জায়গা) বালুর ঝুঁড়ি মাথা থেকে নামিয়ে এসব কথা বলছিলেন শ্রমিক এসকেন্দার আলী।  

শুধু এসকেন্দার আলী নয় ভৈরব নদীতে রাখা লাইটার জাহাজ থেকে ঝুঁড়িতে করে গোলায় বালু নামাচ্ছেন ২০ শ্রমিক।

প্রত্যেক শ্রমিকই নিজের ইচ্ছায় কাজে আসছেন। প্রত্যেকের কথা প্রায় একই রকম, গায়ের তেল মারতে কাজে আসিনি। পেটের টানে কাজে আসছি। যদি বাড়িতে থাকতে হয়, খাবার দিন, তাহলে আর কাজে আসতে হবে না।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর গ্রামের আশকার শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ছেলে-মেয়ে, বউ নিয়ে নয় জনের সংসার আমার। কয়েকদিন ধরে কাজ করিনি। সবাই মিলে মালিককে রাজি করিয়ে কাজ চালু করেছি। আয় না থাকলে, করোনা ভাইরাস লাগবে না। না খেয়েই এমনি-তেই  মারা যাব আমরা।

মো. নাসির, সোহাগ, শাফিকসহ আরও কয়েক জন শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, ভাই ঠাডা পড়া রোধে কেউ সখ করে ঝুঁড়ি টানে না। জাহাজ থেকে এক ঝুঁড়ি সিলেকশন বালু মালিকের গোলায় রাখলে তারা পান দুই টাকা ৪০ পয়সা। এভাবে সারাদিন টানতে থাকেন। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রত্যেকে ৫০০/৬০০ টাকা পান। এভাবেই চলে তাদের সংসার।  

শ্রমিক মো. নাসির বাংলানিউজকে বলেন, সারা বছরই কাজ করে খাই। হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হওয়ায় মানুষের কাছে হাত পাততেও লজ্জা লাগে। গেল ৭-৮ দিন কাজ ছিল না। আমরা কোনো সহযোগিতাও পাইনি কারও কাছ থেকে। তাই বাধ্য হয়ে কাজ করতে এসেছি।

শুধু শরীফ ট্রান্সপোর্টের গোলা নয়, বাগেরহাট শহর ও শহরতলীর অনেক ব্যবসায়ীর গোলায় শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। রিকশা, ভ্যান ও অটোচালকরাও পেটের টানে রাস্তায় রয়েছে বাগেরহাটে।
ছবি: বাংলানিউজশরীফ এন্টার প্রাইজের দায়িত্বে থাকা কাজী আব্দুস ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে আমরা গোলা বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু দু’তিনদিন ধরে অন্যান্য গোলায় দেখছি মানুষ কাজ করছেন। তারপর আমাদের গোলার নির্ধারিত শ্রমিকদের অনুরোধে আমরাও গোলা চালু করেছি। কোনো শ্রমিককে চাপ প্রয়োগ করে গোলায় আনা হয়নি। পেটের টানেই তারা এসেছেন।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে কর্মহীন মানুষের জন্য সরকারের মানবিক সহায়তা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। কেউ একদিন আগে পাচ্ছেন, কেউ একদিন পরে পাচ্ছেন। তবে কেউ এই সহায়তা না পাওয়া থাকবে না। শুধু শ্রমিকরা নয়, কর্মহীন সব মানুষই খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবেন। আমরা চূড়ান্ত সতর্কতার জন্য কাজ কর যাচ্ছি। সরকারের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও জনগণকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।