ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছোট হয়ে এসেছে বাজারের ফর্দ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
ছোট হয়ে এসেছে বাজারের ফর্দ

ঢাকা: মনির হোসেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা। বেশ দরকষাকষি করেই বাজার-সদাই নিচ্ছিলেন। এমন চিত্র এখন প্রায় দেখাই মেলে না। তার সঙ্গে কথা হলো কাজীপাড়া বাজারে। বললেন- কার্যত লকডাউনের এই পরিস্থিতি কতদিন থাকে বলা যাচ্ছে না। বেতন ঠিকমতো হবে কি-না, তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। সামনে রামজান মাস। ঈদের খরচ আছে। তাই একটু হিসেব করেই চলার চেষ্টা করছি।

কবির উদ্দীন নামের এক রেস্টুরেন্ট মালিকের হাতে ধরে রাখা বাজারে ফর্দটা বেশ ছোটই মনে হলো। আলাপচারিতায় বললেন-কতদিন রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হয়, তার ঠিক নেই।

প্রাত্যহিক খরচ তো আর বন্ধ নেই। তাই ব্যয় কমানো ছাড়া উপায় কী।  

একটু হেসেই আবার বললেন, ‘গিন্নিও এখন ছোট ছোট লিস্ট দিচ্ছেন। ’
এমন আরও কয়েকজনের কথাবার্তার সারমর্ম হলো, কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস কেবল মানুষকে ঘরবন্দিই করেনি, প্রভাব ফেলেছে তাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণেও। চলাফেরা থেকে শুরু করে খাদ্যাভাসেও নিয়ন্ত্রণ টানছে মানুষ। যার ফলে বাজারের ফর্দটাও আগের চেয়ে ছোট হয়ে এসেছে।

দোকানিরা বলছেন, আগে যে ব্যক্তি ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে যেতেন, এখন তাদের অনেকের ব্যাগ খালিই থেকে যাচ্ছে। ‘মেপে মেপে’ ক্রয় করছেন জিনিসপত্র। অনেক ক্রেতা আগে যেটা এককেজি নিতেন, এখন আধাকেজি নিচ্ছেন।

রহিম উদ্দীন নামের এক দোকানি বলেন, সবকিছু বন্ধ হইয়্যা গেছে। আয় কইম্ম্যা গেছে বেশির বাগ মানুষের। সামনে কী হইবো, তার ঠিক নাই। এইডা আমরা তো সব থেইক্কা বালা বুজি। এইসব কারণেই মানুষ মনে অয় হিসেব করা শুরু কইর‌্যা দিছে। তাই বিক্রিও কইম্ম্যা গ্যাছে।

শুধু বাজারের দোকানি নয়, রাস্তার পাশে ভ্যানের উপর সবজি বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা। পীরের বাগে দেখা গেলো অনেকের ভ্যানের শাক শুকিয়ে গেছে। সবজিগুলো হারিয়েছে সজিবতা।

নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় এসে সবজি বিক্রির পেশা বেছে নেওয়া সোলেমান আলী বলেন, ব্যবসা তো অইতাছে না। বাড়ি যাইয়াই কী করুম। ত‍াই বাদ্য হইয়াই বাইর হই। বেচা-বিক্রি কম। তাই লাব কম। শাক তাড়াতাড়ি শ্যাষ অয়। কিন্তু এহন ১০ কেজি শাকও বিক্রি হয় না। টমটো, বেন্ডি, করল্ল্যা পইচ্চা যায়। সামনে আরও কী অইবো কে জানে!

কথাগুলো যখন বলছিলেন, স্পষ্ট দেখা গেলো তার কপালে চিন্তার ভাঁজ।
একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো মুদির দোকানে। বাচ্চাদের দুধ, খাবার ছাড়া সব কিছুর বিক্রি বেশ কমেছে। আবার সাপ্লাইও নাই। ফলে অনেকে বেশি চাইলেও দোকানিরাই দিচ্ছে না।

আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারের দোকানি আব্দুস সালাম বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানি আগের মতো আসে না। আগে তিনদিন পরপর আসলে এখন সাতদিন পরপর আসে। ফলে সাপ্লাই কমে গেছে। আবার অনেক কোম্পানির গাড়িই আসে না।

শুধু রাজধানীই নয়, ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। গ্রাম কিংবা মফস্বলের মানুষের হাত প্রায় খালি হওয়ার জোগাড়। এদের মধ্যে যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। আবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও বেকায়দার। কেননা, এদের বেশিরভাগই জমানোর পরিবর্তে সবই প্রায় লগ্নি করে ফেলেছেন। আর ব্যবসা বন্ধ থাকায় রোজগার এখন নেই বললেই চলে। ফলে ব্যয় কমানো ছাড়া কারোরই যে আর উপায় নেই, সে বিষয়টিই ওঠে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২০
ইইউডি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।