ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই ইতিহাসের বিপ্লবী আখ্যান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই ইতিহাসের বিপ্লবী আখ্যান

ঢাকা: রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াইকে ইতিহাসের বিপ্লবী আখ্যান এবং ভবিষ্যতের দিশা বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবস উপলক্ষে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে একথা উল্লেখ করেন।

বিবৃতিতে তারা খাপড়া ওয়ার্ডের সব শহিদ ও যোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই আমাদের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।

খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই ইতিহাসের বিপ্লবী আখ্যান এবং ভবিষ্যতের দিশা। কারাগারের অভ্যন্তরেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। কমিউনিস্টদের সে দিনের লড়াই, আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। আদর্শের প্রতি কমিউনিস্ট-বন্দিদের কমিটমেন্ট, তাদের লড়াই ও আত্মত্যাগের ধারা নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াইয়ের পথ ধরে সমাজতান্ত্রিক-সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।

খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান এবং পাঠ্যপুস্তকে খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

২৪ এপ্রিল ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবস। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট-রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের রক্তের হোলি খেলায় ঝরে যায় ৭টি বিপ্লবী প্রাণ। বন্দি অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন বাড়তে থাকে, কমিউনিস্টদের ধরে ধরে জেলে ভরা হয়। অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জেলের মধ্যেই আন্দোলন শুরু করেন কমিউনিস্ট-বন্দিরা। উত্তেজিত ও বেসামাল হয়ে সরকার কমিউনিস্ট বন্দিদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলে কমিউনিস্ট-বন্দিরা অনশন করতে থাকেন।

ঘানি টানানো হবে না, ভালো খাবার দেওয়া হবে-এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ১৪ এপ্রিল অনশন প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে কমিউনিস্ট-বন্দিদের ওপর জুলুম বাড়তে থাকে। ২১ এপ্রিল রাজবন্দিদের ধমক দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, শাস্তি হিসেবে ১০ জন বন্দিকে কনডেম সেলে (ফাঁসির আসামিকে যে সেলে রাখা হতো) স্থানান্তর করা হবে। কমিউনিস্ট কর্মীরা কনডেম সেলে যেতে অস্বীকৃতি জানান।

২৪ এপ্রিল সোমবার আনুমানিক সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে, রাজশাহী জেল সুপারিন্টেনডেন্ট এডওয়ার্ড বিল দলবল নিয়ে হঠাৎ করেই খাপড়া ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন। এক পর্যায়ে ‘কমিউনিস্টরা ক্রিমিনাল’ বলে গালি দিতে দিতে ওয়ার্ড থেকে বের হয়েই বিল দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বিল বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাগলা ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। বিলের নির্দেশে সিপাহীরা বাঁশ দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে, জানালার ফাঁকের মধ্যে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে সিপাহী ও কয়েদী পাহারা মেটরা, আহত-নিহত নির্বিশেষে সবাইকে পেটাতে শুরু করে। এরপর বিলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওয়ার্ডে ঢুকে আবার লাঠিপেটা শুরু করে।

রক্তস্নাত খাপড়া ওয়ার্ডে ঘটনাস্থলেই ৫ জন শহিদ হন। রাতে মৃত্যুবরণ করেন কম্পরাম সিং আর বিজন সেন। তাদের হয়তো বাঁচানো যেত, কিন্তু আহতদের কোনো চিকিৎসাই হয়নি। নিরস্ত্র ৩৯ জন বন্দির ওপর ১৮০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল সেদিন। খাপড়া ওয়ার্ডের জীবিত প্রত্যেক বন্দিই গুলি ও লাঠিচার্জে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন>> আজ ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবস

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
আরকেআর/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।