ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইউনাইটেডের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
ইউনাইটেডের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

ঢাকা: মায়ের মৃত্যুর জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। ওই হাসপাতালের অবহেলার কারণেই তার মা মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। গত ২৩ এপ্রিল তার মা মাহমুদা খানম (৭৫) মারা যান।

ডা. হায়দার বলছেন, লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন রোগীকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে মাহমুদা খানমকে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৪ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বর্তমানে কম্বোডিয়ায় আছেন। সেখান থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারে আমরা তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। একটি হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে আমাদের মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। আম্মার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড।

তিনি জানান, গত ৫ এপ্রিল তার মায়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু ১১ এপ্রিল তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও করোনার ভয়ে সবাই ফিরিয়ে যে দেয়। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়।  

এরপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কারণ তার রক্তে তখন অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।  

ডা. হায়দার বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল আমার ভাইদের ডেকে বলে, আম্মার দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষাটি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং তাকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানত, যদি ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তবে আম্মা অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন ও মৃত্যুবরণ করবেন। আমার ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আম্মাকে রিলিজ করে দেয়।

তিনি বলেন, কোনো মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই আম্মাকে ওখান থেকে কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

এরপর কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও আম্মার মস্তিষ্কের যে ড্যামেজ হয়েছে তা আর কাটিয়ে ওঠা ওনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। উনি গভীর কোমায় চলে যান। ২৩ এপ্রিল বিকাল সাড়ে চারটায় আম্মা মারা যান।

ডা. জিয়া বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়ার জন্য এবং যথাযথ অক্সিজেন ব্যবস্থায় আম্মাকে পরিবহন না করার জন্য ওনার মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ফলশ্রুতিতে উনি চলে যান গভীর কোমায়। এর সাথে যোগ হয়েছিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-আয়ার ভীতি, অমনোযোগিতা, অপ্রতুলতা আর অদক্ষতা এবং ঘায়ের মাধ্যমে (শুয়ে থাকতে থাকতে তার পিঠে ঘা হয়েছিল) সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়া ‘সেপসিস’, যা খুব দ্রুত আম্মার হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ডা. জিয়া বলেন, আমি জানি ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী। কিন্তু ওদের কৃত অপরাধ চিকিৎসা সমাজের জন্য এক বিভীষিকাময় কলঙ্ক। এই কলঙ্কের কথা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের জানা উচিত, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওদের বিচার হওয়া উচিত এবং যাতে এভাবে স্বজন হারানোর জ্বালা ভবিষ্যতে কাউকে সহ্য করতে না হয়।

অভিযোগের বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি করোনা হাসপাতাল নয়। ওই রোগীর করোনা পজিটিভ আসায়় সরকারি নিয়ম মেনেই উনাকে সরকারি বরাদ্দকৃত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে ওনার ছেলেরাই লিখেছেন যে তার মাকে অন্য কোনো হাসপাতাল ভর্তি নিতে চায় নি। ওই পরিস্থিতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কিন্তু তাকে ভর্তি করে নিয়েছে। তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। ভেন্টিলেটর দিয়ে চিকিৎসাও চলছিল। এ সময় আবার তার করোনা পরীক্ষা করা হলে পজেটিভ আসে। এ হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য নয়। তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাকে রেফার করা হয়েছে। একজন করোনা রোগীকে হাসপাতালে রেখে বাকি ২০০ জন রোগীর জীবনের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনার এক ছেলেকে ডেকে আমরা বুঝিয়ে বলেছি। তখন কিন্তু তারা কোনো অভিযোগ করেননি। রোগীকে যখন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রেফার করা হয়, তখন হাসপাতাল থেকে উনার অ্যাম্বুলেন্সসহ সবকিছু ঠিক করে দেওয়া হয়। ’

ওই নারীর ছেলেদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলেও তিনি দাবি করেন।  

অন্যদিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘রোগীর বিষয়ে আমাদের কোনো অমনোযোগ ছিল না। তাকে যত্নসহকারে সেবা দেওয়া হয়েছে। ওই রোগী ভেন্টিলেটরে ছিলেন। যার কারণে তাকে নিয়মিত মুভ করানো যায়নি। ফলে তার শরীরে ঘা হয়েছিল। এ ধরনের রোগীকে যখন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন ভেন্টিলেটরসহ নিতে হয়। তা না হলে রোগীর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ’

পুলিশ বলছে, সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
এজেডএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।