ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ খুলনাবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২০
মশার কামড়ে অতিষ্ঠ খুলনাবাসী মশা

খুলনা: করোনা আতঙ্কের মধ্যে মানুষ এখন ঘরবন্দি। কিন্তু এরই মধ্যে খুলনায় বেড়েছে মশার উৎপাত। রাত-দিন সবসময়ই এখন মশার উপদ্রব অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বেশি আতঙ্কে আছেন নিম্নআয়ের কর্মজীবী মানুষ। ঘরে বসে থাকায় একদিকে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে করোনা-ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। সবমিলে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।

দিনের বেলায় উৎপাত তুলনামূলক কম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার পর বাসা-বাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে মশা।

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই নিজের ক্ষোভের কথা তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

যদিও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দাবি, আধুনিক ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় অনেক ড্রেন ও খালের মুখ বন্ধ রয়েছে। আর এতে মশা বাড়ছে। মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে।

নগরবাসী বলছে, সিটি কর্পোরেশন মাঝেমধ্যে যে মশার ওষুধ ছিটায় তার মান ভালো না। এর কারণে কোনো কাজ হয় না। করোনা আতঙ্কের মধ্যে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আক্ষেপ করে অনেকে বলছেন, করোনাকালীন প্রধান প্রধান সড়কে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা গেছে। কেসিসিও মশা নিধনের ওষুধ ছিটিয়েছে মাঝেমধ্যে। ওষুধ ছিটানোর পরে মশার উপদ্রব আরও বেড়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাসুদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাসা মিস্ত্রিপাড়া এলাকায়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর মশার উপদ্রব শুরু হয়। করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি মানুষের কাছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এখন নতুন আতঙ্ক।

এই অবস্থায় মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

নগরীর আলি ক্লাব এলাকার বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, আমার এলাকায় সরু রাস্তা আর অরক্ষিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রচুর মশার উৎপাত। আরও আছে এলাকার বাসিন্দাদের ময়লাওয়ালার কাছে ময়লা না দিয়ে সরাসরি ড্রেনে ফেলার প্রবণতা। এর কারণে ড্রেন নোংরা হওয়ায় মশা রাজত্ব শুরু করেছে।

নগরীর কমার্স কলেজ এলাকার বাসিন্দা অপর এক ব্যাংক কর্মকর্তা রেজওয়ান ওয়ালিদ অন্তু বলেন, কমার্স কলেজ মোড়, শামসুর রহমান রোড এলাকায় প্রচুর মশা। দিনে বড় মশা আর সন্ধ্যা হলে ছোট মশা। করোনা শুরু হওয়ার পর কখনই মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়নি।

ইকবাল নগর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শমীম হোসেন বলেন, মশা শুধু রাতে না, দিনেও মশার জ্বালায়। সারাদিন মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। মশার উপদ্রপ এতটাই বেড়েছে যে বাসায় মশার কয়েল, স্প্রে, মশা মারার ব্যাট- কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরী ড্রেন, অসংখ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটছোট জলাধারে কোটি কোটি মশার লার্ভা তৈরি হচ্ছে। খাল ও জলাধার ছাড়াও শহরের বস্তি এলাকা, ময়লার ভাগাড়, ঝোপঝাড়, রাস্তার পাশে থাকা ছোট ছোট টায়ারের দোকান, ঢালাই মেশিন, পরিত্যক্ত পলিথিন, ককশিট, বিভিন্ন মার্কেটের পরিত্যক্ত ছাদ, দুই বাড়ির মাঝের ফাঁকা স্থানে বৃষ্টির পানি জমে সেখানে মশা জন্ম নিচ্ছে।

মশক নিধরে কেসিসির পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। প্রতিবছর এ খাতে করপোরেশনের মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তারপরও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না নগরবাসী। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে মশা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছেন তারা।

কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মশক নিধনে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে সিটি কর্পোরেশন। বরাদ্দকৃত এ টাকার মধ্যে সংস্থাটি ইতোমধ্যে ২ কোটি টাকা খরচ করে ১০টি ফগার ও ৩০টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন, লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্ট্রিসাইড ও ওষুধ ক্রয় করেছে। যা ব্যবহার করে দুটি ধাপে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) প্রধান কঞ্জারভেন্সি অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন, গত ৭ বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার ব্যয় হয়েছে মশা নিধনে, ওষুধেরও সংকট নেই বর্তমানে। মশা নিধনে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনাও করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।   

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, মে ০৬ , ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।