ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা সংকটকালে জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারে টিআইবি’র উদ্বেগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
করোনা সংকটকালে জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারে টিআইবি’র উদ্বেগ

ঢাকা: করোনার এই ক্রান্তিকালে দেশে একের পর এক জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারের উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের স্বার্থে এখনই এই প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার দাবি জানিয়েছে তারা।

শনিবার (৩০ মে) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানায় টিআইবি।  

বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্লিপ্ত দায়হীনতা ও গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে ঋণ সুবিধা আদায়ের জন্য গুলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তরা সম্প্রতি এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ ছেড়েছেন। এ  ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ব্যবসায়িক দুর্বৃত্তায়ন বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।  

টিআইবি বলে, বহুল আলোচিত এই দুই ঘটনার পাশপাশি আসন্ন বাজেটে পাচারকৃত অর্থসহ কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের সুবিধা আরও বিস্তৃত করার যে পরিকল্পনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এমন আশঙ্কা করাটা অমূলক হবে না যে, অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে।  

এ প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে অবিলম্বে ব্যবসা খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কঠোর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে চিকিৎসাধীন পাঁচ ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, যে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন ধরেছিল, সেখানে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে দাহ্যপদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেখানকার অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলো ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। অন্যদিকে নিহতরা সবাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন দাবি তাদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা নাকচ করে দিয়েছেন। মালিকপক্ষের এমন ‘বিভ্রান্তিকর আচরণ’ এবং কোনো প্রকার দায় স্বীকারে ব্যর্থতা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। এমতাবস্থায় ঘটনার তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছে, তারা যে কোনো ধরনের প্রভাব উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন দেবে এবং তাতে যদি ‘অপরাধমূলক গাফিলতির’ প্রমাণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণসহ আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, মুনাফার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মহতি উদ্যোগ থেকেই এইসব বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এমনটাই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু ‘সেবার’ বিষয়টি কেবল সাইনবোর্ডসর্বস্ব হবে, আর ব্যবসায়িক লাভের বিবেচনার কাছে চিকিৎসাপ্রার্থী হেরে যাবেন, গাফিলতির কারণে তাদের প্রাণ যাবে, এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।

‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূল ভিত্তি আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগ’ মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্প্রতি অবৈধ ঋণ পাইয়ে দিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে গুলি করা, একাধিক কর্মকর্তাকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মামলার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে মামলা, তারাই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ‘প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়’ ‘মিথ্যা রোগী সেজে’ ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ দেশ ছাড়লেন। ‘তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি’ এমন অজুহাতে এখানে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে আকাশপথে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ থাকার পরও যে রকম অস্বাভাবিক দ্রুততায় পুরো আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এবং এখন সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর যেভাবে ভার দিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, তাতে অবৈধ যোগসাজশের আশঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে। ’

সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘোষিত অবস্থান’ কেবল তার বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে কী না এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি।  

এ বিষয়ে ড. জামান বলেন, করোনা সংকটের এই কয়েক মাসে আমরা একের পর এক যতগুলো ঘটনা দেখলাম, তাতে এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক এমনটা দাবি করার মতো অবস্থা নিশ্চিতভাবেই সরকারের নেই। এরই মধ্যে আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে যে, আসন্ন বাজেটে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগই কেবল দেওয়া হচ্ছে না, বরং পাচারকৃত অর্থসহ এর আওতা আরও বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দুর্নীতি দমনের ঘোষণা আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দেওয়া শুধু পরস্পরবিরোধী নয়, বরং অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো দৃশ্যমান উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি। অথচ অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে, আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারকে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, দেশের সরকার এখনও মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষীদের হাতে জিম্মি হয়ে যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
এইচএমএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।