নাগরিকরা বলছেন, সরকার যা বলেছে গণপরিবহনগুলো তার কিছুটা পালন করছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আশঙ্কা লুকিয়ে আছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দুই আসনে একজন করে যাত্রী বসছেন। দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাসে ওঠার সময় যাত্রীরা গায়ে গা ঘেঁষে উঠছেন। হেলপার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন, বাসে উঠতে গেলে তার গায়ে স্পর্শ লাগছে সব যাত্রীরই। বাসের হেলপার, কন্ডাকটরও ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। অনেক হেলপারকে নাক বের করে শুধু মুখের ওপরে মাস্ক পরতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে বড় স্পটেজগুলোতে যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেলেও ছোট ছোট স্টপেজে এ ধরনের কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি।
এছাড়া বসার আসনগুলোতে ময়লা দেখলে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়নি।
তাছাড়া প্রত্যেক ট্রিপের পর আসনগুলো জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে কি না তা দেখারও কেউ নেই।
ফলে শুধু হাত জীবাণুমুক্ত করে দূরত্ব বজায় রেখে বসলেই যাত্রীরা আশঙ্কামুক্ত থাকছেন না। অনেক যাত্রীই এ প্রক্রিয়াকে ‘লোকদেখানো’ বলে অভিহিত করেছেন।
গণপরিবহন চালুর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (০২ জুন) রাস্তায় বাসের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। সেই সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যাও বেশি দেখা গেছে। দেখা গেছে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডাও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন মোড়ে কন্ডাকটর ও যাত্রীদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হতে দেখা যায়।
অসচেতনতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনেকের আপত্তি না থাকলেও বর্ধিত ভাড়া অনেকেই এখনো মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া লোকদেখানো হলেও কতদিন এ স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।
সরেজমিনে সদরঘাট থেকে মিরপুরগামী বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে ওঠার সময়ই হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাসের মধ্যে কোনো স্যানিটাইজার ছিল না। এছাড়া যাত্রী ওঠানামার ক্ষেত্রে তিন ফুট শারীরিক দূরত্বও রক্ষা করা হয়নি।
এ বিষয়ে বাসটির হেল্পার রাসেল বলেন, ‘আপনে ওঠার সময়ই তো হাতে স্প্রে মারছি। আর তো কিছু নেই। ’
স্প্রেতে কী কী মেশানো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার জানা নাই। তবে কাজ হয় এটা দিয়া!’
অন্যদিকে, পল্টন মোড়ে বিআরটিসির একটি বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেওয়া হয়নি।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাসে অর্ধেক সংখ্যক আসনে যাত্রী নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু বর্ধিত ভাড়ার তালিকা নেই কোনো বাসেই।
চালক-হেল্পাররা জানান, সরকার থেকে বাড়তি ভাড়ার কোনো তালিকা আসেনি তাদের কাছে। তাই তারা নিজের মতো হিসাব করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। যাত্রীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও আসছে।
এ বিষয়ে সুপ্রভাত পরিবহনের যাত্রী আল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে পল্টন মোড় থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে যেতাম ৩০ টাকায়। ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়লে তা ৪৮ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কাছ থেকে ৫৫ টাকা রাখা হয়েছে। ’
যাত্রীর এ অভিযোগের বিষয়ে বাসের চালক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা তো মুখে মুখে হিসাব করছি। সরকার তো কোনো তালিকা দেয় নাই। ’
প্রায় তিন ঘণ্টা পল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান করেও, বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণে বিআরটিএ বা সরকারের কোনো সংস্থার কোনো অভিযান দেখা যায়নি।
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ ছিল বিস্তর। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘সোমবার থেকে শর্তসাপেক্ষে সারাদেশে গণপরিবহন চলছে। প্রথমদিন অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ’
যাত্রীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সচেতনতা বোধ ও সামাজিক দূরত্ব যথাযথভাবে প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে আমরা এ সংক্রমণ রোধ করতে পারি। নিজেদের অবহেলা ও শৈথিল্য দুর্যোগ আরও ঘণীভূত করতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
ডিএন/এফএম