ঘোষণা অনুযায়ী মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও সিংগাইর উপজেলায় সর্বোচ্চ কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হবে বলে জানান করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির প্রধান এবং জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস।
শুক্রবার (১২ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন।
তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সদস্যদের মতামত এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুযায়ী, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে ঘর থেকে বের হতে বারণ করা হয়েছে। যৌক্তিত কারণ ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ বাইরে থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শপিং মল, দোকানপাট ও কাঁচাবাজার যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করে খোলা রাখা যাবে। তবে আবশ্যিকভাবে বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ রাখতে হবে। সব পর্যায়ের সরকারি, বেসরাকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের অবশ্যই নিজ কর্মস্থলে থেকে দায়িত্বপালন করতে হবে। সবাইকে মুখে মাস্ক পড়া, একে অপরের সঙ্গে তিন ফুট দূরত্ব রেখে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ জেলার বাইরে যাওয়া যাবে না এবং অন্য জেলা থেকে এ জেলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না। যৌক্তিক কারণে জেলার বাইরে থেকে আগত ব্যক্তিদের অবশ্যই নিজ ঘরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
জনসংখ্যা এবং পরীক্ষার আনুপাতিক হারে আক্রান্তের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া এবং সিংগাইর উপজেলাকে হটস্পট ধরা হচ্ছে। এ কারণে গত সোমবার করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির প্রধান এবং জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের আহবানে তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দসহ কমিটির সদস্যরা ওই সভায় উপস্থিত থেকে মানিকগঞ্জের অব্যাহত করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কঠোরভাবে লকডাউন পালনের সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানান।
সরকারি হিসেব মতে, এ পর্যন্ত মোট চার হাজার ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে তিন হাজার ৭১৬টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। যাতে পজিটিভ পাওয়া গেছে ৩৮৭ জনের। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১০ জন, সিংগাইরে ৭৬ জন, সাটুরিয়ায় ৭৪ জন, ঘিওরে ৫২ জন, হরিরামপুরে ৩৩, শিবালয়ে ২৭ জন ও দৌলতপুরে রয়েছেন ১১ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩২ জন এবং নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন ২৪৮ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১০৪ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন।
পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। ১৯ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলাকে লকডাউন করার পর আক্রান্ত হার কিছুটা কমে যায়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ১ জন ও ২য় সপ্তাহে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলে আক্রান্তের হার আবার বাড়তে থাকে। মে মাসের ৩য় সপ্তাহে ৩৬ জন, শেষ সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয় ৮১ জনের। অর্থাৎ মে মাসে আক্রান্ত হয় ১২৮ জন। ফলে এপ্রিল ও মে মাসে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হয় ১৪৯ জন। এরপর ৩১ মে থেকে লকডাউন খুলে দেওয়ার পর আক্রান্তের হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৬ জনের। যার গড় প্রতিদিনে ২৮ জন।
এস এম ফেরদৌস বলেন, সরকারি বিধিভঙ্গ করে মানুষজন বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। অনেকেই মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন না এবং সামাজিক দূরত্বও মেনে চলছেন না। নানাভাবে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করা হলেও তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। করোনা প্রাদুর্ভাব রোধে জনসাধারণকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে তিনি অভিযানেও নেমেছেন। মাস্ক ব্যবহার না করার কারণে জরিমানা করা হচ্ছে। যাদের মাস্ক নাই তাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্নভাবে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জরুরি দরকার ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং প্রয়োজনে বাইরে বের হলে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় অনুরূপ অভিযান চলছে। কিন্তু মানুষজন আইন মানছেন না।
এ কারণে জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থে এবং করোনার সংক্রমণ রোধে মানিকগঞ্জ জেলাকে বিশেষ করে মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও সিংগাইর উপজেলায় কঠোরভাবে লকডাউন পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লকডাউন কঠোরভাবে পালনের জন্য পুলিশ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস।
উল্লেখ্য, ১৯ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি আদেশে ৩১ মে থেকে লকডাউন শিথিল করলে দোকানপাট, অফিস আদালত ও গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে মানিকগঞ্জে করোনা শনাক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘন্টা, জুন ১২, ২০২০
আরএ