তালতলীর তাঁতিপাড়া এলাকা ঘুরে: সর্বত্রই ডিজিটালের ছোঁয়া। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে আধুনিকতার আঁচড় লাগেনি।
উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশও সমানতালে উন্নত শিখরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া সব জায়গায় লাগলেও এখনো সেই আধিকাল কালচারেই রয়ে গেছে এ অঞ্চলের রাখাইনরা।
সম্প্রতি রাখাইন পল্লিতে যাওয়ার পরে কথা হয় বেশ কয়েকজন রাখাইন নারী-পুরুষের সঙ্গে। কথা হয় তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে। যেখানে তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল অনেক আধিবাসী। আর এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত শতভাগ নারী।
রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী এলাকা তাঁতিপাড়া। যে গ্রামে মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পরই তাঁতের ঠক ঠক শব্দ পেয়েই বেড়ে ওঠে শিশুরা। লেখাপড়া করা তো দূরের কথা নামও লিখতে পারো না এই এলাকার অনেকেই। কিন্তু এ এলাকার ঐতিহ্য তাঁতশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। এছাড়া এ পেশার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিনরাত পরিশ্রম করেও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য তারা পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় অনেক তাঁত পেশার ওপর নির্ভরশীল পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।
এ প্রতিবেদককে সঙ্গে কথা হয় ৬০ বছরের লাচিং লাচিং-এর। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই এ পেশায় আমার বাবা-মাকে কাজ করতে দেখেছি। তাদের দেখাদেখি আমিও কাজ শিখেছি।
তিনি আরও বলেন, একটি শার্ট পিস তৈরি করতে সময় লাগে তিন দিন। তা বিক্রি করছি সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। কোনো প্রশিক্ষণ পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছি কিন্তু সেটি পর্যাপ্ত নয়। আরও প্রশিক্ষণ দরকার আমাদের।
তাঁতের পণ্য কতটুকু মার্কেট পেয়েছে জানতে চাইলে অপর এক তাঁত শ্রমিক তংচিং বলেন, বর্তমান বাজারে যে সব পণ্য তৈরিতে আধুনিকতা এবং প্রযুক্তি রয়েছে তা আমাদের এ পণ্যে নেই। এ কারণেও বাজারজাত তেমন একটা হচ্ছে না।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে রাখাইনদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিএফ এর যুগ্ম পরিচালক মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এ শিল্পটাকে দেশের স্বার্থে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর টিকিয়ে রাখতে হলে যেমন তাঁত শ্রমিকদের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন তেমনি তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তারা মান্দাতা আমলের তাঁত দিয়ে একটি চাদর তৈরি করে তাতে সময় লাগে তিন দিন, আর আমাদের দেওয়া আধুনিক তাঁত দিয়ে একদিনেই ২টি চাদর বা শার্ট পিস তৈরি করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশিক্ষণ না থাকা, প্রয়োজনীয় সুতা না পাওয়া এবং শুধুমাত্র শীতকালের কাপড় তৈরি করায় ঠিক মতো বাজার পাচ্ছে না তারা।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে আরডিএফের মাধ্যমে রাখাইন পল্লির তাঁত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ৫০টি তাঁত দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে ছয় মাস পোশাক তৈরির জন্য সুতাও দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
আরএ/