তারপরও সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের যুক্তি, পরামর্শ, রূপরেখা ও সুপারিশ বা প্রস্তাব দিতে থাকবে বিএনপি। গণতন্ত্র চর্চার যেটুকু সুযোগ অবশিষ্ট আছে, তার সবটুকুই কাজে লাগাতে চায় দলটি।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যসহ দলের অন্তত এক ডজন নেতা বাংলানিউজের কাছে এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেছেন।
তারা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের শেষের দিকে সংবাদ সম্মেলন করে অন্তবর্তীকালীন সরকারের একটি রূপরেখা দিয়েছিলে বিএনপির চেয়ারপারসন। সেখানে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব ছিলো।
কিন্তু এই প্রস্তাব সরকার তো গ্রহণ করেইনি, বরং বিষয়টি নিয়ে তখন নানা রকম হাসি-ঠাট্টা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। খালেদা জিয়ার ওই রূপরেখার মধ্যে কিছু অসঙ্গতি থাকায় নাগরিক সমাজ থেকেও বিরূপ মন্তব্য আসতে থাকে।
এরপর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর খালেদা জিয়া ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেও অংশ নেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিএনপির কোনো প্রস্তাব-ই আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপি নেতারা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের অনুগত লোক দিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
নিজেদের দেওয়া কোনো সুপারিশ, পরামর্শ, রূপরেখা বাস্তবায়ন না হলেও চলতি বছর ১০ মে ভিশন-২০৩০ তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী করবে, তারই একটা রূপরেখা ‘ভিশন ৩০২০ তে তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়টি নিয়েও বিরোধী পক্ষ থেকে নানা টিকা-টিপন্নী কাটা হয়। বলা হয়, আওয়ামী লীগ থেকে আইডিয়া চুরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-তে নতুন কিছু নেই। সব-ই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ থেকে নেওয়া!
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এতো কিছুর পরও রাজনীতি চর্চার উন্মুক্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। সে কারণে লন্ডন থেকে ফিরেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন খালেদা জিয়া। এবং এই রূপরেখার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবেন তিনি।
শুধু তাই নয়, যে নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির বিন্দুমাত্র আস্থা নেই বলে সাফ জানিয়ে ছিলেন দলটির নেতারা। সেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেই চলমান সংলাপে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সংলাপে অংশ নিয়ে নিজেদের কথাগুলো পুনরায় বলতে চায় তারা।
সূত্রমতে, বিএনপি নেতারা খুব ভলো করেই জানেন তাদের কোনো কথা আমলে নেওয়া হবে না। কিন্তু কথা বলার যে সুযোগ তারা পাচ্ছেন, সেটিকে কাজে লাগাতে চান। এতে করে জনগণের প্রতি তাদের যে কমিটমেন্ট, সেটা কিছুটা হলেও রক্ষা হবে।
অন্যদিকে নিজেদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো রেকর্ড আকারে থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে তারা বলতে পারবেন, জনস্বার্থে, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আমরা এই প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করে নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতি এবং গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ এখন সীমিত। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটুকু আমরা কাজে লাগাতে চাই। কোনো সুযোগ আমরা হাতছাড়া করবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
এজেড/বিএস