বাংলানিউজ: ২০ দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন...
এহসানুল হুদা: ২০ দলীয় জোটের রাজনীতিটা বর্তমানে একেবারেই স্থবির হয়ে গেছে।
বাংলানিউজ: এর কারণ কী?
এহসানুল হুদা: আমার কাছে মনে হয়েছে যে, নির্বাচনের পরে জোটের বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।
বাংলানিউজ: এখন যে অবস্থা তাতে ২০ দলীয় জোট কি টিকে থাকবে? নাকি ভেঙে যাবে? ইতোমধ্যে তো বেশ কয়েকটি দল বেরিয়ে গেছে।
এহসানুল হুদা: বেশ কয়েকটি দল আসলে বেরিয়ে যায়নি। ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি ২০ দল ত্যাগ করেছে একটি ঠুনকো অজুহাতে। প্রকাশ্যে তাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ২০ দলকে পাশ কাটিয়ে বা বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া আওয়ামী লীগ যে জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে, তাদের হটানো যাবে না। তাদের হটানোর জন্য ডান-বাম বা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী যারা আছে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে পারলেই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে হয়তোবা মুক্তি মিলবে।
বাংলানিউজ: ২০ দল নিয়ে আপনারা কতটা আশাবাদী?
এহসানুল হুদা: আমরা ছোট দল। সীমিত সামর্থ নিয়ে সহযোগিতা করি। আমাদের কর্মসূচি আমরা ছোট পরিসরে পালন করি। বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপিকেই মূল ভূমিকা নিতে হবে। আন্দোলন কর্মসূচি বিএনপির তরফ থেকেই আসতে হবে। বিএনপি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে অচিরেই খুব বড় কোনো আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না। তাদের মধ্যেও অনেক বিরোধ আছে। তাদের সাংগঠনিক কার্যকলাপ ঝিমিয়ে পড়ছে। যেভাবে এগোনোর কথা ছিল সেভাবে এগোতে পারছে না। নির্বাচনের পরে সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে তাদের যে ধরনের বক্তব্যগুলো এসেছে, সেগুলো জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তিকে সামনে রেখেই আন্দোলন করা যাবে না। আওয়ামী লীগ অনেক বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান ফোরামে গতকাল যেটা পাবলিশড হয়েছে, বিশ্বের একশ’ বছরের ইতিহাসে স্বৈরশাসকের জায়গায় এক নম্বর স্থান পেয়েছেন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার হত্যা করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে কব্জা করা হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে যদি বিএনপি সোচ্চার না হয়, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে যদি এক কাতারে না আনতে পারে, শুধু ২০ দল কেন, ১০০ দল নিয়ে এলেও কাজ হবে না। মূল দল কিন্তু বিএনপি। তাদেরই সেই পদক্ষেপটা নিতে হবে।
বাংলানিউজ: বিএনপির প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে, দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে, এ অবস্থায় আপনি কি মনে করেন যে বিএনপিতে নেতৃত্বশূন্যতা চলছে।
এহসানুল হুদা: বাস্তবিক অর্থে কিছুটা তো হতেই পারে। নেত্রী কারাগারে, তিনি বাইরে থাকলে যেভাবে দল চালাতে পারতেন সেটা তো অবশ্যই নেই। (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন) তারেক রহমান বিদেশে আছেন। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে তার যে ইনফ্লুয়েন্স থাকার কথা ছিল সেটা তো হচ্ছে না। সেই জায়গাতে কিছুটা ইনফরমেশন গ্যাপ থাকবে। সেক্ষেত্রে তো কিছুটা নেতৃত্বশূন্যতা অবশ্যই আছে।
বাংলানিউজ: খালেদা জিয়া জেলে থাকাবস্থায় তারেক রহমান যেভাবে বিএনপিকে পরিচালনা করছেন সেটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এহসানুল হুদা: প্রথম কথা হলো আমি বিএনপি করি না। আমি ছোট একটা দল করি। আমি যতটুকু জানি বা বুঝি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে, তিনি দল পুনর্গঠনের যে প্রক্রিয়াটি নিয়েছেন সেটা তিনি (তারেক রহমান) সঠিকভাবে করছেন। শক্তহাতেই করছেন। বিএনপি একটি বড় দল, এই দলে অনেক মতবিরোধ থাকবে, মতাদর্শ থাকবে। সেগুলোকে সমন্বয় করে একটা শৃঙ্খলাযুক্ত দলে পরিণত করার প্রচেষ্টা তিনি চালাচ্ছেন, আমি সেটাকে সাধুবাদ জানাই।
বাংলানিউজ: ছাত্রদলের কাউন্সিলের কার্যক্রম তো থেমে গেল, এ নিয়ে কিছু বলবেন?
এহসানুল হুদা: আপনার প্রশ্নটা এমন হয়ে গেছে যে আমি ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত বা বিএনপির সঙ্গে জড়িত। আমি মনে করি যে ইট ইজ অ্যান অ্যাচিভমেন্ট ফ্রম দ্য অ্যাকটিং চেয়ারপারসন। কাউন্সিল করার যে প্রক্রিয়াটা সফল করে এনেছিলেন, তার জন্য একটা বড় ধরনের অ্যাচিভমেন্ট ছিল। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের যে দৈন্যদশা, তখন ছাত্রদলের কাউন্সিলের একটা রব উঠার পর যে প্রাণের স্পন্দন, প্রাণচাঞ্চল্যে ছাত্রদল উজ্জীবিত হয়েছিল, সেটা দেখে একটা স্বার্থান্বেষী মহল সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সেই কাউন্সিলটাকে বানচাল করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। আদালত বিকেলে একটি আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তারেক রহমান অত্যন্ত শক্ত হাতে ভাইয়া গ্রুপ, সিন্ডিকেট- সবকিছুকে সমন্বয় করে কাউন্সিলটা সফল করার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। জাস্ট একদিন আগে সরকার, গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য ’৭৪ সালে করেছে, ২৯ তারিখেও (৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচনের আগের রাতে) তাই করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করলো। ছাত্রদলের কাউন্সিলটাকে ব্যাহত করার জন্য তারা আদালতের সাহায্য নিলো।
বাংলানিউজ: জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
এহসানুল হুদা: জোটগতভাবে মিটিংয়ে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি। জামায়াতকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে জোটে কোনো কথা হয়নি। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলানিউজ: আপনার মতামত কী? জামায়াত জোটে থাকুক এটা কি চান?
এহসানুল হুদা: আমি আগেই বলেছি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যদি হটাতে হয়, বৃহত্তর ঐক্য করতে হবে। ডান-বাম-ইসলামপন্থী সবাইকে নিয়ে আমাদের এগোতে হবে। জামায়াত কিন্তু একটা শক্তি। জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগও রাজনীতি করেছে। বিএনপিও করছে। এই জামায়াতকে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করেছে। ’৯৬ সালে যে তাদের ব্যবহার করেছিল সেটা সবাই জানে। সুতরাং আপনি বললেন, বা কেউ বললো আর জামায়াতকে বাদ দিয়ে দেবো, সেটা আমি মনে করি অদূরদর্শিতা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/