ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

পা বাড়ালেই সিঙ্গাপুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭
পা বাড়ালেই সিঙ্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে সিঙ্গাপুরের বাস কজওয়ে

জোহর বারু, মালয়েশিয়া: পানিতে চিক চিক করছে সোনালি, লাল-নীল আলো। ভটকা দুর্গন্ধ পাড়ে দাঁড়িয়ে মনোরম সে দৃশ্য দেখতে বেরসিকের মতো বড়োই বেয়াড়াপনা করছিল। এটা নদী কিনা কিংবা কি নাম তা বলতে পারলেন না সেখানে থাকা কয়েকজন দেশি-মালয় ভদ্রলোক। তবে জাল ফেলে বড় বড় মাছ ধরার গল্প বলতে ভুললেন না। পরে জানা গেলো এটা আসলে নদী নয়, পরিচিত জোহর প্রণালী হিসেবে। যেটি মালয়েশিয়ার স্থলসীমা থেকে আলাদা করেছে ছোট্ট উন্নত দেশ সিঙ্গাপুরকে।

কুয়ালালামপুর থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় আমাদের দোতলা বিলাসবহুল বাসটি নামিয়ে দেয় জোহর বারুর জেবি লারকিন বাসস্ট্যান্ডে। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মতান্ত্রিক বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রী টানাটানি করতে গেলো।

তবে অন্য প্রদেশ নয়, সিঙ্গাপুরের যাত্রী। আগেই জানা ছিল সিঙ্গাপুর সীমান্ত এ জেলায়। মিনিট দশেক দাঁড়াতেই অন্তত ৮-১০ জন পীড়াপীড়ি করলেন সিঙ্গাপুরের বাসে উঠতে। ভাড়া চার/পাঁচ সিঙ্গাপুর ডলার (বাংলাদেশি ২০০-২৬০ টাকার মতো। )।
বাসস্ট্যান্ডে সিঙ্গাপুরের বাস কজওয়েসিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়ার জোহর বারুকে যুক্ত করেছে যে ব্রিজটি, সেটিকে বলে কজওয়ে। এ নামে বেশ কয়েকটি গাড়িও দেখা গেলো বাসস্ট্যান্ডে। যাইহোক এসব দেখে শুনে সিঙ্গাপুর দেখার আর তর সইছিল না। তাই হোটেলে ঢোকার আগেই সোজা সীমান্তে চলে যাওয়া। সদালাপী আহমেদ ভাই দেশি মানুষ পেয়ে নিয়ে গেলেন বেশ আনন্দের সঙ্গে। থামলেন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা কেএফসির সামনে। প্রণালীর বাঁধের কোলঘেঁষে বিশ্বের জনপ্রিয় এ চেইন রেস্তোরাঁ।
রাতে জোহর বারু থেকে দেখা সিঙ্গাপুররেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ফটাফট ক্লিক সবার। কিন্তু স্যুয়ারেজের দুর্গন্ধযুক্ত পানি দাঁড়াতে দিলো না বেশিক্ষণ। কেএফসিতে ঢুকে খাবার অর্ডার করে প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়া থাকা আহমেদ ভাই জানালেন তার জন্মদিন। উইশ করে বেশ মজা করেই খাওয়া হলো। কিন্তু শুধু রাতে সিঙ্গাপুর দেখে পোষালো না। সিদ্ধান্ত পরেরদিন বিকেলে একবার ঢুঁ মারা।
দিনে দেখা সিঙ্গাপুরযে কথা সেই কাজ। হাজির পরেরদিন বিকেলে। সূর্য তখন ডুবুডুবু। সুন্দর মসৃণ সড়ক ধরে যেতে যেতে দেখা যায় সিঙ্গাপুর। তবে কনস্ট্রাকশনের কাজ হওয়ায় পাড়ের অধিকাংশ ঢাকা। বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে যৌথ ভাগ থাকা প্রণালীর জোহর বারু অংশে। শুনলাম বড় বড় বিল্ডিং অ্যাপার্টমেন্ট উঠবে। ইনভেস্টর হতে পারে চীন।  

চলতে চলতে স্টুলাং লাউট নামে জায়গায় এসে দেখা গেলো বেশ খোলমেলা। বিকেলটা সুন্দর করে কাটাতে গাড়ি নিয়ে এসেছেন সবাই। পাড়ে বসার বেঞ্চ, গাছগাছালিও আছে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সুন্দর করে সাজানো। এখানে বসে ৩০-৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাতাস খেতে খেতে সিঙ্গাপুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে মন্দ লাগছিল না। এখানেও একদফা চললো ফটোসেশন।
স্টুলাং লাউটে সিঙ্গাপুর উপভোগের সুন্দর পরিবেশআবার চলা শুরু হয়ে এবার থামা কজওয়ে পেরিয়ে পশ্চিমে। দক্ষিণে সিঙ্গাপুর। আর এই প্রণালীর সঙ্গে আবার যোগ আছে জোহর নদীর। মাল্টিপল ভিসা থাকলে এই ব্রিজ দিয়ে হেঁটেও সিঙ্গাপুর ঢোকা যায়। আর অর্ধকিলোমিটার ব্রিজ দিয়ে গাড়ির চলাচল দেখে একবারও মনে না হতে পারে এটা দুই দেশের মধ্যে চলাচল করছে কিংবা দু’পাশে ইমিগ্রেশন সারতে হয়। তবে মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা কার্ডে টাকা জমা রেখে পাঞ্চ করেও চলাচল করেন।
স্টুলাং লাউটে সিঙ্গাপুর উপভোগের সুন্দর পরিবেশএতো কাছাকাছি হলেও অবৈধভাবে সিঙ্গাপুর ঢোকা মুশকিল। শোনা গেলো ওপারে তারা কি প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেখেছে যেটা মানুষকে শর্ট লাগিয়ে মেরে ফেলতে পারে। আবার সীমান্ত প্রহরী হিসেবে নাকি তৈরি থাকে রোবট, যেটা আবার গুলি করতে সক্ষম। তাই ওপারের বড় উঁচু হাইরাইজ বিল্ডিং যতই পানিতে ছায়া ফেলে হাতছানি দিক সাবধান!

... আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

**হীরায় মোড়া রাজার মুকুট!

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৭
এএ/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।