ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লন্ডন

রোহিঙ্গা সংকট মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বন-পরিবেশে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
রোহিঙ্গা সংকট মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বন-পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)

প্যারিস, ফ্রান্স থেকে: মিয়ানমারের দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বলে বিশ্বনেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ‘ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ কথা জানান।  

শেখ হাসিনা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এক মিলিয়নের (১০ লাখ) বেশি নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় আমাদের দেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।

মানবিক দিক বিবেচনা করে কক্সবাজারের এক হাজার ৭৮৩ হেক্টর বনভূমিতে এসব বাস্তুচ্যুত মানুষকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। প্রলম্বিত এই উদ্বাস্তু সমস্যা ওই অঞ্চলে আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে সেখানে জলবায়ু অভিযোজন (ক্লাইমেট অ্যাডাপশন) বিরাট চ্যালেঞ্জে পড়েছে।

জলবায়ু ন্যায়বিচার আনতে এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করারও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবার যৌথ উদ্যোগেই কেবল আমরা এ বিশ্বকে নিরাপদ করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ ও অভিযোজনের জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত অঙ্গীকার ও কার্যক্রম শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং বৈষম্য মোকাবেলায় অবদান রাখবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে উত্থাপিত পরিবেশ বিষয়ক বৈশ্বিক চুক্তির কথা উল্লেখ করছি। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রোর নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।  

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যদিও এ ভয়াবহ আপদের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। নিজেদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রশমন ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে আমাদের টেকসই উন্নয়ন কৌশলে এটিকে মূলধারায় রাখা হয়েছে।

উন্নয়শীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে জিডিপির এক শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের কৃষিকে আমরা জলবায়ু সহিষ্ণু করছি। আমরা শহরে পানি সরবরাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছি। জাতিসংঘ-বিশ্বব্যাংকের সমন্বিত পানিসম্পদ বিষয়ক শীর্ষ পর্যায়ের প্যানেলের (এইচএলপিডব্লিউ) সদস্য হিসেবে আমি আমাদের সব অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশের কাজে পানিসম্পদের দীর্ঘমেয়াদী ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি উপায় বনায়ন। আমরা ইতোমধ্যে বৃক্ষরোপণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সংরক্ষণে আমরা ৫০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলারের একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস, লবণাক্ততা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর ভূমি বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজনীয় কর্মসূচির মাধ্যমে ২ শতাংশ বন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান বন ২২ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে উন্নীত করবো আমরা।

অংশীদারদের সহযোগিতার পাশাপাশি নিজস্ব সম্পদ দিয়ে লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টা জোরালো করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭/আপডেট ০৩০১ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/

** রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করবে ফ্রান্স

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।