সাতক্ষীরা থেকে: কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পুব আকাশে সূর্য যখন নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখন যাত্রা শুরু। উদ্দেশ্য, খুলনা থেকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জের টাইগার পয়েন্ট।
গাড়ি যখন খুলনার জিরোপয়েন্ট দিয়ে সাতক্ষীরা মহাসড়কের এক কিলোমিটার পথ এগোলো, তখনই শুরু হলো নৌকার মতো দোলা। মনে হচ্ছিলো, গাড়িতে নয় নৌকায় কোথাও যাওয়া হচ্ছে। এভাবে দুলতে দুলতে দুপুর একটায় এসে পৌঁছানো হলো সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।
কথা হয় সাতক্ষীরার এনডিসি আবু সাঈদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন অংশের পর্যটকদের বড় বাধা হলো বেহাল সড়ক। বাগেরহাট, খুলনার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের বেশি এলাকা দেখা যায় সাতক্ষীরার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় অনেকে আসতে চান না।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খানিকটা বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। শুরু হয় ঝাঁকুনি। এভাবেই পৌঁছানো হয় মুন্সীগঞ্জের টাইগার পয়েন্টে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় খুলনা-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ছাল-চামড়া বলতে কিছুই নেই। রাস্তায় বড়বড় গর্ত। ব্যস্ততম এ সড়কটির বেহাল দশার কারণে জনসাধারণের দুর্ভোগের অন্ত নেই। প্রত্যেকদিন সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানবাহনও বিকল হচ্ছে অহরহ।
জানা যায়, সাতক্ষীরা স্থলবন্দর ভোমরা থেকে মালামাল নিয়ে যানবাহনগুলো খুলনা, বাগেরহাট, ফকিরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ যায়। অন্যদিকে মাওয়া হয়ে ঢাকা, ফেনী, সিলেট, জামালপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে থাকে খুলনা-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পরিবহন, লোকাল বাসসহ দৈনিক কয়েক হাজার যান চলাচল করে।
সাতক্ষীরায় সুন্দরবনের কিছু অংশ রয়েছে। যে অংশ দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন। তাদের এ সড়কের কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে এখানে সুন্দরবন দেখতে আশানুরূপ পর্যটক আসেন না বলে জানায় স্থানীয়রা। এ রুটের প্রাইভেটকার চালক আব্দুল হালীম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জের টাইগার পয়েন্ট পর্যন্ত ১শ ৬৫ কিলোমিটার রাস্তা। এর ৯০ ভাগই খারাপ। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে চার ঘণ্টার পথ ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। অনেকেই এ রাস্তায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চালক আব্দুল্লাহ বলেন, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও কার্পেটিংয়ের পিচ-খোয়া উঠে যাওয়ায় যানবাহনগুলোর পাত, এক্সেল, টায়ার নষ্ট, ব্রেকফেলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়। মাঝ পথে মাঝে মধ্যে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তেমনি আমদানি ও রফতানি করা মালামাল সময়মতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এছাড়া সড়কটিতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা তো লেগেই রয়েছে।
জানা গেছে, খুলনা-সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটির মতো যশোর থেকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কেরও একই দশা। যে কারণে যশোর বিমানবন্দর থেকে যারা সাতক্ষীরার সুন্দরবন দেখতে চান তাদেরও পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে।
খুলনা থেকে সাতক্ষীরা আসার পথ ও যশোর থেকে সাতক্ষীরা আসার সড়কটির উন্নয়ন করা হলে সাতক্ষীরার সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে পর্যটক ও স্থানীয়দের অভিমত।
আরও পড়ুন...
** ভালো সড়কে পর্যটক টানছে বাগেরহাট
** মুড়ি ভাজার শব্দে ঘুম ভাঙে! (ভিডিও)
** নারকেল-সুপারির বাগানে ভরপুর বাগেরহাট
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস/এসএনএস