বাংলানিউজের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৬ লাখের বেশি মানুষ সাবেক পূর্বপাকিস্তান থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
তখন বড়মাপের নেতৃত্বরা ত্রিপুরা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতেন এবং এখান থেকে রাজ্যের বিশিষ্ট জনের সঙ্গে বৈঠক ও পরামর্শ করে ভারতের অন্যান্য জায়গায় এমনকি বিদেশেও যেতেন। মূলত ওই নেতারা ত্রিপুরাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতেন।
সূর্য্যমনিনগরের মুক্তিযোদ্ধাদের এই ট্রেনিং ক্যাম্পটি আগরতলার পাশের জায়গায় হওয়ায় প্রায় সকলেই সেখানে পরিদর্শনে যেতেন। মেজর জেনারেল জিয়াও এই ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
যুদ্ধ শেষে সবাই নিজ নিজ জায়গায় চলে যান বা অনেকে অন্যত্র স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তখন সূর্য্যমনিনগরের ট্রেনিং ক্যাম্পের বিশাল এলাকা খালি পড়ে থাকে। তাই পরে ত্রিপুরা সরকার এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে।
অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা তথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বাংলাদেশে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাম্মানিক ডিলিট পদবী গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি মিলিয়ে তার সঙ্গে ছিলেন মোট ১০৫ জন।
এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি, ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়দ মন্ত্রকের সাবেক মন্ত্রী কপিল সিব্বাল, ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিল, ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য অধ্যাপক অমিয় কুমার বাগচী এবং উপাচার্য অধ্যাপক অরুণোদয় সাহা উপস্থিত ছিলেন।
সাম্মানিক ডিলিট গ্রহণের পর শেখ হাসিনা রীতি মেনে বক্তব্য দেন। তিনি ইংরেজিতে বক্তব্য শুরু করেন। তখন উপাচার্য ডা. দীপু মনিকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষের বাইরে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যার কথা শুনতে। বাংলায় বক্তব্য দিলে তারা বুঝতে পারতো। তখন ডা. দীপু মনি একটি নোট লিখে পাঠান। তাতে তিনি লিখেন, বাইরে সাধারণ মানুষ আপনার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। অনুগ্রহ করে বাংলায় বক্তব্য রাখুন।
এই নোটটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছতেই তিনি ইংরেজিতে দেওয়া বক্তব্য বন্ধ করে বাংলায় বক্তব্য শুরু করেন এবং বলেন, এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা থেকেছেন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করেছেন। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমি মুক্তিযুদ্ধের তীর্থভূমিতে এসেছি। এ কথা বলে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এর পর অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে বাংলাতেই বক্তব্য শেষ করেন। তার বক্তব্য শুনে বাইরে হাজার হাজার মানুষ করতালি দিতে থাকেন।
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে অরুণোদয় সাহাকে প্রশ্ন করা হয়, শেখ হাসিনাকে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়ার পরিকল্পনা কী করে এসেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিলো। তাছাড়া শেখ মুজিব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক, তারই মেয়ে শেখ হাসিনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
এসসিএন/এজে