ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মুজিবনগরে কলার জমিতে পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত কৃষকের

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
মুজিবনগরে কলার জমিতে পেঁয়াজ চাষে বাজিমাত কৃষকের

মেহেরপুর: মেহেরপুরে কলা চাষের পাশাপাশি একই জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে যেমন কলা পাচ্ছেন তেমনি পাচ্ছেন পেঁয়াজও।

এদিকে দুটি ফসল একই সময়ে রোপণ করায় সময় নষ্ট হচ্ছে না। একই জমিতে চাষের ফলে দুটি ফসলের জন্য আলাদা করে সার দেওয়া লাগছে না। এতেই অধিক লাভবান হচ্ছেন মুজিবনগর উপজেলার কৃষকেরা।  

জানা গেছে, কলা চাষ দীর্ঘ মেয়াদি একটি ফসল। তাই চাষিরা এর মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি মুনাফা পাচ্ছেন। এর ফলে জেলার মুজিবনগর উপজেলা দিন দিন এই চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জমির উত্তম ব্যবহার ও ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কলা-পেঁয়াজের সাথী ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন জেলার কৃষি বিভাগ।

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গত বছরে এ উপজেলায় কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষ করেছিল এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। সে তুলনায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেছেন এক হাজার ৫০০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে সাথী ফসল পেঁয়াজ ও কলা ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষকেরা।

মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুল গাজী বলেন, এবছর আমি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। সেই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজের চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার ৫০০ কলার গাছ রয়েছে। এখান থেকে আমি ৪০০ কাঁদি কলা আশা করছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো পাব। কলা চাষে বেশি দিন সময় লাগে। তাই এর সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করেছি। যাতে কলার জমিতেই পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এই জমি থেকে ১৪০-১৫০ মণ পেঁয়াজ তুলতে পারবো বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, এর ফলে আমি কম সময়ে দুটি ফসল পাচ্ছি। আর পেঁয়াজ ও কলার জন্য আলাদা আলাদা করে যত্নও নিতে হচ্ছে না। আমাদের এলাকায় এই সাথী ফসলের চাষটা খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে এখন।

শিবপুর গ্রামের আরেক কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি এবারে সাত বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি। কলার মধ্যে পেঁয়াজ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছি। আমার যে খরচ হয়েছে তা পেঁয়াজেই উঠে আসবে। কলা বিক্রি করে যা পাবো সবই লাভ থাকবে। জমি ফেলে রেখে লাভ নেই, তাই আমরা কলা আর পেঁয়াজ একসঙ্গে চাষ করেছি।

একই উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক মিনারুল ইসলাম বলেন, সুখসাগর পেঁয়াজ চাষে খরচ বেশি হয়। জমি চাষ থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। তাই আমরা পেঁয়াজের জমিতে কলার বোগ লাগাই যাতে করে পেঁয়াজ চাষের খরচে কলা চাষটাও উঠে আসে। যেকোনো একটি ফসলে যদি ভালো দাম না পায় তাহলে আরেকটির ওপর ভরসা থাকে। ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আমরা একসঙ্গে দুই ফসলের চাষ করি এবং দুই ফসলে আমরা লাভবান হই।

মুজিবনগর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, আমরা কৃষকদের কলার সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। সেইসঙ্গে আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। আর কৃষকেরা কলার জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এটি খুবই লাভজনক। এ জেলায় আগামীতেও এই সাথী ফসলের চাষ বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা বেশ লাভবান হয়েছেন। কলা ও পেঁয়াজের একসঙ্গে দুই ফসল চাষে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়া কলার সঙ্গে পেঁয়াজ, কচুর সঙ্গে পেঁয়াজ, কলার সঙ্গে হলুদ চাষ করারও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সাথী ফসল হিসেবে একটার সঙ্গে আরেকটা ফসল চাষের যে সুযোগ থাকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমরা কলার প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ সাথী ফসলের সম্প্রসারণ করছি।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, আমরা কৃষকদের কলা ও পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। এর ফলে কৃষকেরা চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। কলা এবং পেঁয়াজ একসঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে মেহেরপুরের কৃষকেরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা একই সময় দুটি ফসল আবাদের ফলে খরচ কমিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।