ক্ষেতের মরা গাছেই তারা খুঁজে চলেছেন ‘গুপ্তধন’। উকুন বাছার মতে করে যেন গাছের মাথাগুলো বেছে চলছেন তারা।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার যমুনার চরাঞ্চলে মসুর ডালের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের মসুর কলাই চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এরপরও যা হয়েছে তাই ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার যমুনার চরাঞ্চল ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ২ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে মসুর কলাই চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার চরাঞ্চলের প্রায় ৯শ’ হেক্টর জমিতে মসুর কলাই চাষ করা হয়।
এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও সদর উপজেলার পশ্চিমাংশে বর্তমানে কিছু কিছু জমিতে কৃষক নতুন করে মসুর কলাই চাষ করছেন।
ক্ষেতে লাগানো মসুর কলাই তুলছেন অনেকেই। বস্তায় বা অন্য কিছুতে ভরে তা নিয়ে বাড়ি ছুটছেন কৃষক। কেউ তা রোদে শুকাতে ব্যস্ত। এরপর চলছে মাড়াই কাজ। আবার অনেকেই কাটা-মাড়াইয়ের কাজ মাঠেই সম্পন্ন করে নিচ্ছেন।
যেন কৃষাণ-কৃষানির দম ফেলার ফুসরত নেই। যদিও শেষমেষ তাদের মুখ মলিনই হয়ে উঠছে। কেননা আশানুরূপ ফলন মিলছে না কোন ক্ষেত থেকেই।
কৃষক আব্দুল হান্নান ৩ বিঘা জমিতে মসুর কলাই চাষ করেছিলেন। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে মাত্র ২ মণ হারে। গেল বছর একই পরিমাণ জমি থেকে তিনি ১২ মণ মসুর ডাল পেয়েছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের বেশির ভাগ গাছ মরে যায়। এ কারণে ফলন কম হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান এই কৃষক।
একই কথা জানালেন জব্বার আলী, মজিবর রহমান, তাহেরা, মঞ্জুয়ারা বেগম, হোসেন আলীসহ চরাঞ্চলের একাধিক মসুর কলাই চাষি।
এসব চাষি বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। ক্ষেতে সেচ দেওয়ার মত কোন ব্যবস্থাও ছিল না। একদিকে বিরাজ করছিল প্রচণ্ড খরা। অন্যদিকে তপ্ত বালু। এসব কারণে ক্ষেতের সিংহভাগ গাছ মরে যায়।
আবার অনেক গাছে ঠিকমত দানাও আসেনি। সবমিলিয়ে ভাগ্য বিড়ম্বনায় এবার মসুর কলাই চাষে ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন চরাঞ্চলের এসব চাষি।
ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বাংলানিউজকে বলেন, মসুর কলাইয়ের জমিতে খুব একটা পানি প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন ছিল তাও চাষিরা ব্যবস্থা করতে পারেননি। এছাড়া বৃষ্টিপাতও হয়নি। এসব কারণে আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চরাঞ্চলের মাটি সাধারণত বেলে-দোঁআশ হয়ে থাকে। আর বেলে মাটি পানি ধরে রাখতে পারে না।
কিছু সময় মসুরের জমিতে হালকা সেচের প্রয়োজন হয়। তখন সেচ দিতে না পারলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে না পারায় চাষিরা এবার মসুর কলাই চাষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি বলেও যোগ করেন কৃষিবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম