এখন নষ্ট ফসলের দিকে অসহায় ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে থাকা ছাড়া করার কিছুই আর নেই। কেঁদে বুক ভাসিয়েও লাভ হবে না কোনো।
সরেজমিন ঘুরে তরমুজ চাষীদের ক্ষতির করাল চিত্রই দেখা গেল নোয়াখালীর বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়। অসময়ের শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তরমুজ ফসলের। তাছাড়া বৃষ্টিতে তরমুজের জমিতে জমে গেছে পানি।
বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, বেশি ক্ষতি হয়েছে নোয়াখালী সদর ইউনিয়ন, চর জব্বার, ওয়াপদা, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জের প্রান্তিক জনপদের তরমুজ চাষীদের। নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। বীজ রোপনের পর থেকে অনকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। আর দুই সপ্তাহ পরেই শুরু হয়ে যেতো ঘরে ফসল তোলা । কিন্তু বৃষ্টি দিয়েছে সব মাটি করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, বৃষ্টি নামার পরপরই নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে। কিন্তু এতেও খুব একটা ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন না কৃষকরা।
চর জব্বার ইউনিয়নের কৃষক কবির আহম্মদ জানান, শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন সে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আর কোনো উপায় নেই। সামান্য কিছু ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারলেও বাদবাকি ফসলের প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কবির আহম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, লাভের আশায় ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এখন পুরোটাই লোকসান। লাভের বদলে আমাদের কাঁধে এখন লোকসানের বোঝা। সে বোঝা বইতে হবে।
চর জব্বার এলাকার আরেক কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিতে তার ১২ একরের তরমুজের খেত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তরমুজের চাষ করে লাভের বদলে বিপুল লোকসান গুনতে গিয়ে তিনি এখন দিশাহারা।
সুবর্ণচর উপজেলার ডালচর ইউনিয়নের আমির হোসেন নামের আরেক কৃষক জানান, তার ফসলের খেতে তরমুজের ক্ষতি না হলেও গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ন্ত গাছগুলো পানিতে ডুবে মারা যাওয়ায় তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
কৃষকদের এ ক্ষতির ব্যাপারে কথা হয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রণব ভট্টাচার্য’র সঙ্গে। তিনি জানান, তরমুজ চাষ করে চাষীরা বিনিয়োগের প্রায় চারগুণ লাভ করতে পারেন। আর সে কারণেই নোয়াখালীর কৃষকরা তরমুজ চাষে বেশি আগ্রহী। অনেকেই ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। চৈত্রের শুরুতে অসময়ের এ বৃষ্টিতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে না উঠতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে কিছু ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
জেএম