অবশেষে অধিক তাপ ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু বারি ৭২ জাতের আলু নিয়ে উপকূলে শুরু হয়েছে সফলতার গল্প। কৃতিত্বটা পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নে বাংলাদেশ কৃষিগবেষণা ইনিস্টিটিউটের পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের।
গবেষণা শেষে বারি ৭২ জাতের আলু এবছর মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ করে এরই মধ্যে সফলতাও পেয়েছেন তারা।
পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, পটুয়াখালী ও বরগুনার উপকূল অঞ্চলের চাষিরা ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল (সাধারণ) জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন। এসব আলুর বীজ বপন করতে হয় নভেম্বর মাসের মধ্যে। কিন্তু বারি ৭২ বপন করা যাবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। সাধারণ জাতের আলু যেমন স্বাভাবিক নিয়মে চাষ করে ৮৫ দিনের মধ্যে তোলা সম্ভব, এ আলুও একই খরচে একইভাবে ৮৫ দিনের মধ্যে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, সাধারণ আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টন হলেও, বারি ৭২ জাতের এই আলুর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৫০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ জাতের আলুতে অনেক গুণের মধ্যে একটি বড় গুণ হচ্ছে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও লবণ চাষাবাদে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পড়ে না। আলুর এই জাতটি এরই মধ্যে উপকূলে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগামীতে গোটা উপকূলজুড়ে বারি ৭২ জাতের আলুর ব্যাপক চাষ শুরু হবে বলে আশা করা যায়।
গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে বহু বছর আগ থেকেই পুরোনো ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ হয়ে আসছে। যার ফলন প্রতিবছর কমে আসছে। পোকামকড়ের আক্রমণও বাড়ছে। এতে আর্থিকভাবে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক চাষিদের লাভবান করতেই গবেষণার ফল হিসেবে বারি ৭২ জাতের আলুর বীজ দিয়ে তাদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এবছর ২০ জন কৃষক ২শ শতাংশ জমিতে বারি ৭২ জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন।
প্রথম বছরের এ ফলনের পর বারির গবেষকরা এরই মধ্যে অন্য চাষিদের সাথে কথা বলছেন। তাদের বারি ৭২ জাতের আলু চাষ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। আলুর জাত, রোগ নির্ণয়, পোকামাকড়ের আক্রমন প্রতিরোধ ও বীজ সংরক্ষণ নিয়ে এরই মধ্যে বারির গাজীপুরস্থ কন্দাল ফসল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র কুণ্ডু, পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ ও রেজাউল করিম প্রেমুখ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
তবে পটুয়াখালীতে কোনো হিমাগার না থাকায় এখনই এ আলুগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু বীজের প্রয়োজন হলে পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের মাধ্যমে সহজেই এ বীজ চাষিরা হাতে পাবেন বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ।
বারি-৭২ জাতের আলু চাষ করে সফলতা পেয়ে বেশ খুশি চাষিরা। এমনটাই জানালেন লেবুখালি এলাকার আলুচাষি মোঃ আনোয়ার ও মোঃ জাকির আকন।
তারা বলেন, যদি একই জমিতে একই খরচে জাতভেদে দ্বিগুণ আলু উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তবে লাভের পরিমাণও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। হতাশায় উপকূলের অনেক চাষি আলু চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আবার ভাগ্যবদলের স্বপ্ন বুনছি আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
এমএস/জেএম