খেতে সয়াবিন গাছগুলো বেড়ে ওঠায় ফাঁকা জমি চোখে পড়ে না। ফসলের মাঠ তো নয়, যেন সবুজের চাদর।
উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। এজেলা সয়াবিনের রাজধানী হিসাবে পরিচিত। দেশের উৎপাদিত প্রায় ৮২ ভাগ সয়াবিন এ উপকূলের। ভৌগলিক অবস্থান ও এখানকার উর্বর মাটি সয়াবিন চাষে উপযোগী। প্রায় দুই যুগ ধরে এ জেলায় সয়াবিনের চাষ হয়ে আসছে। বাম্পার ফলন হয় বলে প্রতিবছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা।
জেলার রামগতি, রায়পুর, কমলনগর, রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আমন ধান কাটার পরই কৃষকরা সয়াবিন আবাদের প্রস্তুতি নেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের বীজ বোনা শেষ হয়েছে। এখন গাছ বেড়ে উঠেছে; চলছে পরিচর্যা। গাছে-গাছে ধরতে শুরু করেছে চড়া। চলছে শেষ মুহূর্তের যতœ। এখানকার সয়াবিন চাষীদের যেন স্বস্তি নেই। ভালো ফলন ঘরে তুলতে অবিরাম কাজ করছে মাঠে। তপ্ত দুপুরেও খাটছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে বীজ সংগ্রহ ও বুনতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়ে বীজ থেকে চারা গজিয়েছে। চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর থেকেই আগাছা দমন শুরু করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ, চরগাজি, চর পোড়াগাছা, চর লক্ষ্মী, চর আলেকজান্ডার, চর বাদাম, চর সীতা, কমলনগর উপজেলার চর ফলকন, চর জাঙ্গালিয়া, চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স, সদর উপজেলার চর রমণীমোহন, চর মনসা, চর উভুতি, টুমচর ও রায়পুরের হায়দরগঞ্জসহ জেলার প্রায় সর্বত্র সোয়াবিনের আবাদ হয়েছে। এছাড়াও মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোতেও সয়াবিনের চাষ করা হয়েছে।
জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পড়ে থাকা ওইসব জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য আসছে। কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ মুরাদ বলেন, সয়াবিন চাষে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। সয়াবিনে ধানের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায়। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। যে কারণে এখানকার কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী। সয়াবিন বছরের সব সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, আবাহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়। ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিস কর্মকর্তারা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
লক্ষ্মীপুর কৃষি অফিস (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রামগতিতে ১৮ হাজার ২০০, কমলনগর ১৬ হাজার ৩১০, রায়পুরে ৭ হাজার ৯৬০, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৯৫০ ও রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টও জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়।
প্রসঙ্গত, সয়াবিন তেল জাতীয় শস্য। গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। গাছের কাণ্ডে ফুল হয়। ফুল থেকে শিমের মত চড়াতে বীজ জন্মে, ওই বীজগুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। সয়াবিন ভোজ্য তেলের প্রধান উৎস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। কচি ও শুকনো সয়াবিন বীজ, সবজি ও বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার হয়। পরিণত সয়াবিন বীজ থেকে শিশুখাদ্য. সয়া দুধ, দই ও পনির, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও পোল্ট্রি ও ফিশফিড তৈরি, রং, সাবান এবং প্লাস্টিক মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৭
জেএম/