এদিকে ছত্রাক আক্রমণের কথা বার বার কৃষি কর্মকর্তাদের বলার পরও সময় মতো তারা ক্ষেত পরিদর্শনে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা।
যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন ধানক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে ক্ষেতের ধান।
শার্শার সাদিপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ধান চাষী মোসলেম আলী বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহ আগে কৃষি অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ আসেনি। আর যখন আসলেন তখন ক্ষেতের অধিকাংশ ধান নষ্ট হওয়ার মুখে।
চাষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যেভাবে ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করলে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। কোনো ধান ঘরে তুলতে পারবো না। তাই কিছু বাঁচাতে কাঁচা অবস্থায় ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব রোগে ওষুধে তেমন কাজ হচ্ছে না। তাই আক্রান্ত শিষ কেটে ফেলছি। যাতে অন্য শিষে ছত্রাক আক্রমণ করতে না পারে।
ধান চাষী খলিল জানান, তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। একসঙ্গে দুই-তিন রকমের ছত্রাকের আক্রমণে যে অবস্থা তাতে এবার বিঘায় ১০ মণ ধানও পাওয়া যাবে না।
ধান চাষী তোতা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরে একদিনও কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা যায় না। আর বিপদের সময় যদি তাদের কাছে না পাওয়া যায় তাহলে উপজেলাতে কৃষি অফিস থেকে চাষীদের লাভ কি?
মাঠে এখন বোরো ধানে। জানা যায়, এ বছর শার্শায় বুরো ধানের জন্য ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেওয়া হয় । ধান চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। প্রতি বিঘা ধান চাষ করতে চাষীদের প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘায় ২২ থেকে ২৫ মণ ধান উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ জমিতে ছত্রাকের আক্রমণে এবার অর্ধেক ধান পাওয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ১৮ জন মাঠকর্মী কম রয়েছে। এ কারণে চাষীরা ডাকামাত্রই লোক পাঠানো সম্ভব হয় না। তবে একটু দেরি হলেও মাঠকর্মী পাঠিয়ে ক্ষেত পরিদর্শন ও পরামর্শ দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, ধান থেকে হলুদ ফুল ফোটাকে ফলস স্মার্ট ছত্রাক বা চাষীদের ভাষায় ‘লক্ষ্মীর গু’ রোগ বলা হয়। এক্ষেত্রে চাষীদের অটো স্টিন বা নইন নামে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। আর ধানের গাছ শুকিয়ে যাওয়াকে (ব্যাকটেরিয়াল লিড ব্লাইড) ছত্রাকজনিত রোগ বলা হয়। এক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিউবিট, ৬০ গ্রাম পটাশ, ২০ গ্রাম জিংক ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া দোকান থেকে ক্রসিন এজি নামক ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যারা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করেছেন তারা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আর যারা তাদের পরামর্শ না নিয়ে স্থানীয় দোকানদারদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এজেডএইচ/আরআর/বিএস