ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

কৃষি

থোকায় বাঁধা লিচুতে লাল-সবুজের লুকোচুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:১৭, মে ১২, ২০১৭
থোকায় বাঁধা লিচুতে লাল-সবুজের লুকোচুরি থোকায় বাঁধা লিচুতে লাল-সবুজের লুকোচুরি- ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: মধু ফল লিচুর দেশ হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। আর বর্তমানে  দিনাজপুরের প্রতিটি গাছের লিচু সবুজ থেকে ধীরে ধীরে লাল রঙয়ে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।

বিকেলে গাছের যে লিচুটির রং সবুজ দেখা যায় পরদিন সকালে তার পুরোটা না হলেও অর্ধেক লাল বর্ণ ধারন করে।

বর্তমান লিচু গাছগুলোর চিত্র এমনটাই যে থোকায় বাঁধা লিচুর মাঝে লাল ও সবুজের  লুকোচুরি খেলা চলছে। সবুজ আর লালের মিশ্রণের কারণে বাগান গুলোর গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলন্ত লিচু গুলো দেখতে চমৎকার লাগছে।

গত কয়েকদিন আগের গুটি গুটি লিচুর ভেতরে ভরে গেছে রসে। রস ভরা থাকলেও এখন খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠেনি দিনাজপুরের সুনামধন্য এই লিচু। তবে চাষীরা ধারনা করছেন আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে রসালো ফল লিচু।

থোকায় বাঁধা লিচুতে লাল-সবুজের লুকোচুরি- ছবি: বাংলানিউজ

চলতি মৌসুমে লিচু চাষীরা রেকর্ড পরিমানের ফলনের আশা করলেও গত কয়েকদিনের টানা ঝড় বৃষ্টির কারণে লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে গাছে যে টুকু ফল রয়েছে তাই সঠিক ভাবে পাওয়ার আশায় পরিচর্যায় হেলা করছেনা চাষীরা। ঝড়-বৃষ্টি আবার হলে এবারে লিচু উৎপাদনে সংকট দেখা দিতে পারে।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কসবা এলাকার লিচু চাষী মো. ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আমার বাগানের ১৫টি গাছে লিচু ধরেছে। চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমানের ফলনের আশা করলেও টানা ঝড়-বৃষ্টির কারণে সে আশা বিলীন হয়ে যায়। তবে গাছে যে পরিমানের ফল রয়েছে তা ধরে রাখতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে পরিচর্যা করে যাচ্ছি। গাছের গুটি গুটি লিচু গুলোতে রসে ভরে গিয়ে পরিপূর্ণ হওয়ার দিকে। এরই মধ্যে প্রতিটি লিচুর রংয়ের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে এসকল লিচু খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে। বর্তমানে রস ভড়া থাকলেও হালকা টক হবে। আর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সস্তায় বাজারে পাওয়া যাবে মধু ফল লিচু।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘রসগোল্লা’ হিসেবে পরিচিত লিচু চাষে দিনাজপুর জেলায় নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এক সময় শুধু দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর ও এর আশপাশে এক থেকে দেড়শ’ একর জমিতে লিচু চাষ হতো। সেইসঙ্গে বাড়ির আঙিনায় লাগানো হতো দু-একটি লিচু গাছ। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে লিচু চাষ।
থোকায় বাঁধা লিচুতে লাল-সবুজের লুকোচুরি- ছবি: বাংলানিউজ

কৃষি বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১২ সালে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১৮০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।

দিনাজপুর জেলার সদর, চিরিরবন্দর, বিরল ও বীরগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে লিচু চাষ হয়। এসব এলাকায় বেদানা, বোম্বাই, চায়না থ্রি-ফোর, মাদরাজিসহ নানা জাতের লিচু চাষ হয়।

মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক মাস আগেই মুকুল থাকা অবস্থায় লিচু বাগান কিনেছেন। কেনার পর থেকে শ্রমিক দ্বারা গাছ পরিচর্যা অব্যাহত রয়েছে। এবারে দিনাজপুর জেলার লিচু দেশসহ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করা হবে। আর মাত্র ক’দিন পর বাগানের লিচু পাড়তে শুরু হবে। বাগান থেকে লিচু সরাসরি দেশের বাহিরে পাঠানো হবে। এর মধ্যে টানা ঝড়-বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও তেমন ক্ষতি হয়নি। যদি আবার ঝড়-বৃষ্টি হয় তাহতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী মো. আঙ্গুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বছরের এই একটি মৌসুমে ব্যবসা করে কয়টা টাকা উপার্জন করা যায়। লিচু বাজারে উঠার সময় হয়ে আসছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো শুরু করেছি। প্রথমে মাদরাজি লিচু বাজারে উঠবে। এরপর পর্যায়ক্রমে বোম্বাই, চায়না থ্রি-ফোর, বেদানাসহ অনান্য দেশীয় লিচু উঠবে। এসকল লিচুর মধ্যে বেদানা, চায়না থ্রি-ফোর ও বোম্বাই লিচুর চাহিদা বেশি থাকে। তাই এ সকল লিচু বাগানে বাগানে গিয়ে কিনে আনতে হয়। তবে শহরের কালিতলা লিচুর পাইকারি বাজার থেকে কিনলে দাম একটু বেশি পড়ে যায়।    

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় চার হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা ঝড়-বৃষ্টিতে গাছের দুর্বল ফলগুলো ঝড়ে গেছে। এতে কোনো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখন আর কোনো ভয় নেই। গাছে মুকুল ধরা থেকে শুরু হয়েছে। যা লিচু উঠা পর্যন্ত কৃষি বিভাগের সদস্যরা চাষীদের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।