ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সুস্বাদু হাড়িভাঙার চাষ বাড়ছে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
সুস্বাদু হাড়িভাঙার চাষ বাড়ছে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান। ছবি: ইসমাইল হোসেন

ঢাকা: স্বাদের বিচারে অতুলনীয় হাড়িভাঙা। সেই হাড়িভাঙার নাম মুখে মুখে ছড়িয়েছে গোটা দেশে। বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষও হচ্ছে হাড়িভাঙার। বিশেষ করে রংপুরের আশেপাশে বিস্তার লাভ করছে হাড়িভাঙার চাষ।  

সরকারি নথি থেকে জানা গেছে, আদি নিবাস রংপুরের মিঠাপুকুরের গণ্ডি পেরিয়ে পাশের জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে হাড়িভাঙা আম।  

২০১৪-১৫ অর্থবছরের তথ্য দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় জানায়, এই ৫ জেলায় ২ হাজার ১১৩ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭১টি হাড়িভাঙা আমগাছ রয়েছে।

 

এই অর্থবছরে রংপুর জেলার মেট্রোপলিটন, সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৪২৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয় এই আম। এসব এলাকার তিন লাখ ৭৩ হাজার হাড়িভাঙার গাছ রয়েছে।

এছাড়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুরে ৩১৯ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার ২২৯টি গাছের চাষ রয়েছে হাড়িভাঙার।

কুড়িগ্রামের সদর ও রাজারহাটে ৬৪ হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ১৯২টি গাছ, লালমনিরহাটের সদর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় ১২৯ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ৫০০ গাছ এবং নীলফামারির সদর ও সৈয়দপুরে ১৭৮ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙার গাছ রয়েছে ৪৯ হাজার ৫৫০টি। হাঁড়িভাঙা আম।

অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় জানায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এই পাঁচ জেলায় দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙার চাষ ধরা হয়েছিল।
 
প্রতি হেক্টরে ১১ মেট্রিকটন ফলন ধরে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই হাজার ১১৩ মেট্রিকটন উৎপাদন হয়েছিল বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স.ম. আশরাফ বাংলানিউজকে জানান, জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বেশির ভাগ মিঠাপুকুর এবং বদরগঞ্জ উপজেলায়। কিছুটা সদরেও রয়েছে।

হাড়িভাঙা আম রংপুরের ঐতিহ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশপাশের জেলাগুলোতেও বিস্তার হচ্ছে হাড়িভাঙার চাষ। এছাড়া সারা দেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় জানায়, আম ইতোমধ্যে গুটি গুটি হয়ে বড় হতে শুরু করেছে। জুন মাসের ২০ তারিখের পর আম পরিপক্ক হবে। জুনের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয় ফলের গড় ওজন।

অর্থকরী ফসল হিসেবে হাড়িভাঙা আমের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়। পুষ্ট কাঁচা আম ৪-৫ দিন এবং পাকা আম ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
আমের গড় বাজার দর কেজিপ্রতি মৌসুমের শুরুতে ৮০-১০০ টাকা, মৌসুমের মাঝামাঝি ৫০-৮০ টাকা এবং শেষ দিকে ৩০০-৪২৫ টাকা।

হেক্টর প্রতি উ‍ৎপাদন ব্যয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা এবং হেক্টর প্রতি আয় ৫-৬ লাখ টাকা বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়।
হাড়িভাঙা আম পাকলেও শুধু বোঁটার কাছাকাছি অংশ হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে। পুষ্ট আম শাঁস শক্ত অবস্থায় খেতে হয়। বেশি পাকলে শাঁস ও আঁটির মধ্যবর্তী অংশ নরম, কালো ও দুর্গন্ধময় হয়।

উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে বাঁশের টুকরি বা খাঁচা, কাগজের কার্টুন এবং প্লাস্টিকের ক্রেক ব্যবহার করা হয়। কৃষি অফিস জানায়, দেশের বাইরে কিছু পরিমাণে আম পাঠানো হয় শুধু আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবদের জন্য। এ পর্যন্ত বিদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম পাঠানো হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।