অভাবকে বিদায় দিয়ে বাগানের আয়ে মাত্র দুই বছরেই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন এক সময়কার দরিদ্র নুরল হক।
সরেজমিনে গেলে নুরল হক বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৪ সালে বাড়ির সামনে পতিত সামান্য জমিতে নার্সারি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
কিন্তু ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছিল না নুরল হকের।
২০১২ সালে জীবিকার প্রয়োজনেই রাজধানী ঢাকায় গিয়ে দেখতে পান, থাই পেয়ারা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনছেন মানুষ। এ পেয়ারার বাগান করার ইচ্ছা জাগে নুরল হকেরও। সে ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে চলে যান কানসাটের থাই পেয়ারা বাগানে। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে এনে নিজের নার্সারিতেই চারা তৈরি করেন তিনি।
নুরল হক জানান, নিজের নার্সারির চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক থাই পেয়ারার চাষ করে সাফল্য পান। এরপর স্থানীয় ধানচাষিদের জমি বছরে বিঘাপ্রতি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে লিজ নিয়ে থাই-৩ জাতের পেয়ারার বাগান তৈরি করেন তিনি।
২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের পেয়ারার চাষ শুরু করে এখন ৪০ বিঘা জমিতে তার রয়েছে ৬টি প্রজেক্ট। যার মধ্যে ৫টি প্রজেক্টই লিজ নেওয়া জমিতে।
এসব প্রজেক্টে দৈনিক ২৫০-৩২০ টাকা মজুরিতে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন বলেও জানান নুরল হক।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে নুরল হক জানান, তুলনামূলক একটু উঁচু জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে গর্ত খুঁড়ে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে প্রতিটি গর্তে একটি করে থাই পেয়ারার বীজ/কলম চারা লাগাতে হয়। এরপর শুধুই পরিচর্যা। গাছে ফল এলে প্রতিটি পেয়ারা পলি ব্যাগে ঢেকে দিতে হয়। যার ফলে এ পেয়ারা হয় শতভাগ বিষমুক্ত।
তিনি জানান, এ পদ্ধতিতে শ্রমিক খরচ একটু বেশি হলেও বাজারে বিষমুক্ত ফলের চাহিদাও অনেক। তাই মুনাফা প্রচুর। একবার চারা রোপণ করলে আর প্রয়োজন পড়ে না। আর এ থাই-৩ জাতের পেয়ারা সারা বছর পাওয়া যায়।
নুরল হকের ৬টি প্রজেক্টের পেয়ারা বিক্রি হয় বছরে ৩৫-৩৮ লাখ টাকার। চলতি বছরও ৩৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন তিনি। এর মধ্যে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
নুরল হকের পেয়ারা বাগানের শ্রমিক জোহরা বেগম, রাধা রানী, ননিবালা, জোবেদা বেগম ও ইন্দ্রজিৎ বাংলানিউজকে জানান, সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা থাকায় গত কয়েক বছর ধরে এসব বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে নুরল হকের এ বিষমুক্ত পেয়ারা রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই যাচ্ছে। পেয়ারার মৌসুমে প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্য সময় চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হয় থাই পেয়ারা।
শুধু বাগানই নয়, নার্সারিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারার কলম ও বীজ-চারাও বিক্রি করেন তিনি। তার এ সাফল্য দেখে আশেপাশের এলাকায়ও বাড়ছে থাই পেয়ারার বাগান। অনেকেই এগিয়ে আসছেন বিষমুক্ত পেয়ারা চাষে।
বেকার যুবকদের প্রতি নুরল হকের আহবান, চাকরি বা বিদেশের দিকে না ঝুঁকে বাগান করে ভিনদেশের চেয়ে আপন ভূখণ্ডে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ বাংলানিউজকে জানান, ব্যাগিং পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ শতভাগ বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। ফলে এ পদ্ধতিতে চাষ বেশ লাভজনক। নুরল হকের সাফল্য দেখে দিন দিন বাড়ছে ফলচাষির সংখ্যাও।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৭
এএসআর