একটা সময় পাট চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছিলো না রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। পাট চাষ করে লোকসান গুণতে গুণতে সোনালি আঁশ খ্যাত পাট কৃষকের গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছিল।
আশানুরূপ বৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকানোর কাজ চলছে। তাই এরই মধ্যে বাজারে পাটের আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু বাজারে আশানুরূপ দাম ও ক্রেতা না থাকায় কৃষকেরা পানির দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা হাটের পাইকারি ক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, দিন দিন পাটের দাম কমে যাচ্ছে, তাই বেশি দামে তারা এখন পাট কিনতে ভয় পাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাট কিনে মজুদ শুরু করেছেন। কিন্তু পাট চাষিরা পাট বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
রাজশাহী সদর উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে হাল চাষ, সার, বিজ কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। কমপক্ষে ৩ বার জমিতে নিড়ানি দিতে ১৫ জন মজুরকে দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। পাট কাটতে ২ হাজার টাকা ও ধুতে লাগছে ২ হাজার টাকা।
অর্থাৎ এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের ব্যয় হয় ৯ হতে ১০ হাজার টাকা। অথচ একবিঘা জমিতে বড়জোর পাট পাওয়া যায় ৮ মণ। বাজারে মণ প্রতি ১১শ’ টাকা হিসেবে দাম দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮শ’ টাকা। এতে কৃষককে বিঘা প্রতি এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় পাট চাষে আবারও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন স্থানীয় চাষিরা।
অথচ দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের পাট নিয়ে এবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি এবং জাগ দেওয়ারও সমস্যা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে গ্রাম এলাকায় যে দামে পাট বিক্রি হচ্ছে তাতে করে চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা আশা করেছিলেন, এবার অন্তত দুই হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হবে।
পাটের দাম বৃদ্ধিতে সরকার এখনই কোনো উদ্যোগ না নিলে আগামীতে পাটের আবাদ কমে যাবে বলে জানান পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের এই কৃষক।
এদিকে, গ্রাম এলাকায় চাষিদের অভাবের সুযোগ নিয়ে জমিতে থাকতেই ফড়িয়ারা আগাম টাকা দিয়ে পাট কিনছেন। চাষিরা বলছেন, এবার দাম ভাল পাওয়ার আশায় তারা বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এখন পাট বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট না থাকলে এবার পাটের দাম আরো বেশি হতো।
পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের পাট চাষি ইমরান আলী জানান, এবার ৭ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। বর্তমানে পাট কাটা শুরু করেছেন। বিঘায় ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১২ মণ করে পাট পাচ্ছেন।
কিন্তু বাজারে ১১শ’ থেকে সর্বোচ্চ ১২শ' টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এ সময় পাট বিক্রি হয়েছে ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকায়। আর মৌসুমের শেষ দিকে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে এবার দাম আরো বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমতি দামে পাট বিক্রি করে চাষিরা হতাশ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী জানান, চলতি বছর রাজশাহীতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৬শ' ২২ হেক্টর। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯শ' ৪২ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গতবছর দাম ভাল থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। বাজারে কেবলই পাট ওঠা শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিকে দাম কিছুটা কম থাকলেও ক্রমেই বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, অগস্ট ৭, ২০১৭
এসএস/জেডএম