ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষকের মাঠ-গোলা দু’টিই ফাঁকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
কৃষকের মাঠ-গোলা দু’টিই ফাঁকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: বন্যার পানিতে টানা আটদিন ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হচ্ছে লালমনিরহাটের কৃষকদের ঘামঝরা আমনের ক্ষেত। বাড়ি-ঘরের পানি নেমে গেলেও তলিয়ে আছে ফসলি জমি। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্বল আমন ধানও নষ্ট হওয়ায় হাহাকার চলছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে।

কৃষকরা জানান, সদ্য রোপন করা আমনের চারা পরিপক্ক না হতেই টানা আটদিন পানির নিচে থাকায় পচে নষ্ট হয়েছে। অনেকের ক্ষেতে আস্তানা গেড়েছে কচুরিপানা।

কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ধান গাছের মাথা ভেসে উঠলেও প্রচণ্ড দাবদাহে সেগুলোও পচে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একদিকে ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত, অন্যদিকে আগামী দিনের বেঁচে থাকার অবলম্বন নষ্ট হওয়ায় চরম  হতাশায় ভুগছেন চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর সংস্কার না করেই তাই স্বপ্ন বাঁচাতে অনেকে ছুটছেন ধান ক্ষেতের পরিচর্যায়, সরাচ্ছেন কচুরিপানা। কেউ কেউ বন্যার স্রোতে ভেঙে পড়া ধান গাছগুলোকে দাঁড় করানোর অবিরাম চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ কাদায় ঢেকে যাওয়া গাছ বের করে ধুয়ে দিচ্ছেন।

হাতিবান্ধা উপজেলার কৃষক জব্বার, খালেক ও তমেজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাত্র ১৫/২০ দিন বয়সী আমনের চারা পচে নষ্ট হয়েছে। ক্ষেতে কোনো গাছ নেই,  আছে কাদা-মাটি আর পানি। নতুন করে রোপনের মতো চারাও নেই। মাঠের সঙ্গে এবার গোলাও ফাঁকা রয়ে যাবে। আগামী দিনে পরিবার-পরিজনের খাবার যোগান নিয়ে চিন্তায় আছি’। ছবি: বাংলানিউজসদর উপজেলার কৃষক জহুরুল ইসালাম,  ও ইসাহাক আলী বাংলানিউজকে জানান, ক্ষেত ডুবে আছে ধরলার পানিতে।   বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। আগামী ধানের মৌসুম না আসা পর্যন্ত কৃষকদের খাদ্যের যোগান দিতে সরকারের প্রতি দাবিও জানান তারা।

আদিতমারীর কৃষক রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক বিঘা জমিতে  আমন চাষ করেন তিনি। চারা লাগানোর ১৫ দিনের মাথায় ডুবে যায়, গত আটদিনেও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি তার ক্ষেত। এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নিজেদের ভাতের চিন্তাও করছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর  জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮২ হাজার ২৫৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৮৪ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮১১ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চারা রোপনের একমাসের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবেছে ৩১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত। যার মধ্যে ৮ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমি এখনও পানির নিচে নিমজ্জিত। এ ছাড়াও ৭১০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেতের মধ্যে  বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬৫ হেক্টর জমি।

তবে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, কৃষি বিভাগের এ তথ্যের চেয়ে দ্বিগুণ ক্ষতি হয়েছে তাদের।

অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধুভূষণ রায় বলেন, আমন ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি না সরায় ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাচ্ছে না। ধান গাছের শিকড় থাকলে কুঁড়ি গজাবে। আপাতত কচুরিপানা ও ধান গাছে লেগে থাকা বন্যার কাদা-মাটি ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।