বন্যার এই ভয়াবহতার প্রভাব পড়বে কার্তিক মাসে গিয়ে। যখন তাদের এই ধানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কথা।
বিশেষ করে মেরীপাড়া, বোয়ালমারি, সুজারকুঠি, বিছনা, জয়ন্তিপুর, রামকানাইপুর, টিওরমারি, তরফমৌজা, বাঁশপুকুরিয়া, মাটিয়ালপাড়া, আজমপুর, মহারাজপুর ও মোনাইল গ্রামের কৃষকদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। ধান না পেলে তারা কি খাবেন। আর কি দিয়ে পরবর্তী চাষাবাদ করবেন।
গ্রামগুলোর প্রধান অর্থকরি ফসলই হচ্ছে ধান। অনেকের এই ধানেই পেটের ভাত, ধান বিক্রি করে সওদাপাতি আবার নতুন করে চাষাবাদ সবই ধান দিয়েই হয়। তাদের চোখোমুখে বিরাজ করছে রাজ্যের হতাশা। সব মূলধন বিনয়োগ করেছেন জমিতে। কেউ কেউ ধারদেনা করেছেন, আবার অনেকে দাদন ব্যবাসায়ীর দারস্থ হয়েছেন। সবই তাদের বানের পানিতে ভেসে গেছে।
এমনই একজন বর্গাচাষী গুপিনাথপুর গ্রামের বাবলু মিয়া, বর্গা নেওয়া এক একর জমিতে দাদনের টাকায় আমন রোপন করেছিলেন। সবই তার জলে ভেসে গেছে।
এক একর জমিতে ধান রোপনের জন্য চাষ করতে গেছে তিন হাজার ছয়'শ টাকা (শতক ৩৬ টাকা, প্রত্যেক চাষ ৬ টাকা হিসেবে ছয় চাষ), ধান রোপনের মজুরী গেছে চার হাজার টাকা। বাড়ির বীজতলা ছিল সে খরচ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অনেকে নতুন করে ধান রোপন করছেন। কিন্তু তার কোনো মূলধন নেই। সে কারণে নতুন করে ধান রোপনের ইচ্ছা থাকলেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। অনেক বর্গাচষীকে মালিকরা নোটিশ দিয়েছে, হয় ধান লাগাতে হবে না হয় জমি ছেড়ে দিতে হবে। তারা রয়েছেন উভয় সংকটে।
কৃষরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন সহায়তা দেওয়ার। আমরা সেই আশায় বুক বেঁধে আছি। দ্রুত সহায়তা পেলে ঘুরে দাড়াতে চাই।
অনেকেই নতুন করে ধান রোপন শুরু করেছেন। সবচেয়ে সংকট দেখা দিয়েছে বীজতলার। পাঁচ'শ টাকার চারায় পঞ্চাশ শতক জমিতে রোপন করা যেতো। এখন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার চারা প্রয়োজন হচ্ছে। সেখানে বাগড়া দিচ্ছে বৃষ্টি। ফের বন্যার শঙ্কা করছেন তারা।
ত্রাণ নানান দিক থেকে নানান শ্রেণি পেশার লোক দিচ্ছে। সরকারি তৎপরতাও বেশ জোরালো। যে কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠি কিছুটা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছেন বাবলু মিয়ারা। যারা না পারন কারো কাছে হাত পাতাতে, না পারছেন মুখ খুলে কিছু বলতে।
এই শ্রেণির লোকজনদের সহায়তা দিতে না পারলে কৃষির চাকা স্থবির হয়ে পড়তে পারে। একারণে এখনই সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন টুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
তিনি জানান, এদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া গেলে মাঠগুলো আবার সবুজে ভরে উঠবে।
তবে তাদের বিষয়ে কোনো সুখবর দিতে পারেনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহীদ মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষ সহায়তা আসেনি। মনে হচ্ছে বোরো চাষের পূর্বে আসতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৭
এসআই/জেএম